ডেস্ক রিপোর্ট
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীবিধৌত টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার জ্যেষ্ঠ সন্তান তিনি। তার শৈশবকাল কাটে পিত্রালয়ে। ’৫৪-এর নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে ছাত্রজীবন থেকে প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হন তিনি। বর্তমানে শুধু জাতীয় নেতাই নন, তিনি আজ একজন বিচক্ষণ বিশ্বনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন আজ। মধুমতি নদীবিধৌত গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গীপাড়া গ্রাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান। নিভৃত এই পল্লীতেই ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কোল আলোকিত করে জন্মগ্রহণ করেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি মা-বাবার প্রথম সন্তান। শৈশব-কৈশোর কেটেছে বাইগার নদীর তীরে টুঙ্গীপাড়ায় বাংলার চিরায়ত গ্রামীণ পরিবেশে, দাদা-দাদীর কোলে-পিঠে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে শেখ হাসিনা সবার বড়। তার অন্যান্য ভাইবোন হলেন শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা ও শেখ রাসেল। গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সাথে বেড়ে ওঠেন শেখ হাসিনা। গ্রামের সাথে তাই নিবিড় সম্পর্ক তার।
এ দিকে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিনে তাকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। গতকাল সোমবার এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, শেখ হাসিনা তার বাবার মতোই গণমানুষের নেতা।
রাষ্ট্রপতি বলেন, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, গতিশীল নেতৃত্ব, মানবিক মূল্যবোধ দিয়ে শুধু দেশেই নন, বহির্বিশ্বেও তিনি অন্যতম সেরা রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জাতির পিতার আদর্শকে বুকে ধারণ করে তার নেতৃত্বে বাঙালি জাতি এগিয়ে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধুর আজীবন লালিত স্বপ্ন সুখীসমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার পথে।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গীপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য (এমপিএ) নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারকে ঢাকায় স্থানান্তর করেন। তিনি পুরান ঢাকার মোগলটুলির রজনী বোস লেনে বসবাস শুরু করেন। পরে বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য নির্বাচিত হলে আবাসস্থল স্থানান্তরিত হয় ৩ নম্বর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে। ১৯৫৬ সালে শেখ হাসিনা ভর্তি হন টিকাটুলীর নারীশিক্ষা মন্দির বালিকা বিদ্যালয়ে। এভাবেই শুরু হয় তার শহুরে জীবনের পালা।
১৯৬৫ সালে শেখ হাসিনা আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন ঢাকার বকশীবাজারের তৎকালীন ইন্টারমিডিয়েট গভর্নমেন্ট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে। কলেজে অধ্যয়নকালে তিনি কলেজ ছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী পদে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বঙ্গবন্ধুর আগ্রহে পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার সাথে শেখ হাসিনার বিয়ে হয় ১৯৬৮ সালে। বিয়ের কিছু দিন পর শুরু হয় ১১ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান। রাজনৈতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় কিশোর বয়স থেকেই তার রাজনীতিতে পদচারণা। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ছয় দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। জাতির এক ক্রান্তিলগ্নে শেখ হাসিনার অনুপস্থিতিতে ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। ডাক আসে দেশমাতৃকার হাল ধরার। ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন শেখ হাসিনা। দেশে ফিরে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে চলে তার একটানা সংগ্রাম। জেল-জুলম, অত্যাচার কোনো কিছুই তাকে পথ থেকে টলাতে পারেনি। অগোছালো দলকে সুসংগঠিত করতে প্রাণান্তকর পরিশ্রম করেন তিনি। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দু-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে টানা তৃতীয়বার এবং স্বাধীন বাংলাদেশে চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। শেখ হাসিনা বর্তমানে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।
একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে অবদানের স্বীকৃতস্বরূপ এরই মধ্যে তিনি মর্যাদাপূর্ণ অসংখ্য পদক ও পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিশ্বব্যাপী টিকাদান সংস্থা গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনেশন ইমিউনাইজেশন টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কারে ভূষিত করেন। সর্বশেষ গত ২১ সেপ্টেম্বর জাতিসঙ্ঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সল্যুশনস নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন) দারিদ্র্য দূরীকরণ, পৃথিবীর সুরক্ষা এবং সবার জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ গ্রহণের সর্বজনীন আহ্বানে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশের সঠিক পথে অগ্রসরের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘এসডিজি অগ্রগতি পুরস্কার’ প্রদান করে।
গত সাড়ে ১২ বছরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, কর্ণফুলী টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মহাসড়কগুলো ফোর লেনে উন্নীত করা, এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনসহ ছোট-বড় বেশ কিছু মেগা প্রকল্পের কাজ করার ক্ষেত্রে সরকারের একটি বড় অর্জন রয়েছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু ও মেট্রোরেল আজ দৃশ্যমান। আশ্রয়ণ প্রকল্প নিয়ে টুকিটাকি সমালোচনা থাকলেও গরিব ও নিঃস্ব মানুষের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী তাদের বসবাসের যে ব্যবস্থা করেছেন, তা নজিরবিহীন সাড়া পেয়েছে। এ ছাড়াও শত ব্যস্ততার মধ্যে তিনি সাহিত্যচর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
এক বর্ণাঢ্য সংগ্রামমুখর জীবন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার। সাফল্য গাথা এই কর্মময় জীবন কুসুমাস্তীর্ণ ছিল না, ছিল কণ্টকাকীর্ণ। সামরিক স্বৈরশাসন আমলেও তাকে কারা নির্যাতন ভোগ ও গৃহবন্দী থাকতে হয়েছে। বারবার তার জীবনের ওপর ঝুঁকি এসেছে। অন্তত ২০ বার তাকে হত্যার অপচেষ্টা করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েও তিনি অসীম সাহসে তার লক্ষ্য অর্জনে থেকেছেন অবিচল।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে পালন করবে আওয়ামী লীগ।
এদিকে আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন পালন করবে। তার অনুপস্থিতিতেই দিনটি উৎসবমুখর পরিবেশে নানা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ আজ বিকাল ৩টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনাসভার আয়োজন করেছে। এছাড়া আজ কেন্দ্রীয়ভাবে বাদ জোহর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হবে। একই সঙ্গে সকাল ১০টায় ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায়, সকাল ৯টায় খ্রিষ্টান অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ (সিএবি) মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চে এবং বেলা সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় বিশেষ প্রার্থনাসভার আয়োজন করেছে। একই দিনে ঢাকাসহ সারা দেশে সব সহযোগী সংগঠন আলোচনাসভা, আনন্দ শোভাযাত্রা, দোয়া মাহফিল, বিশেষ প্রার্থনা ও আলোকচিত্র প্রদর্শনীসহ দিবসটির তাত্পর্য অনুযায়ী যথাযথ স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে বিভিন্ন উপযোগী কর্মসূচি উদযাপন করবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করার জন্য দলের সকল সহযোগী সংগঠন, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সংস্থাসমূহের সকল স্তরের নেতাকর্মী, সমর্থক ও সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এমপি।