নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
চারদিন পর লাশ হয়ে ক্যাম্পাসে ফিরলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ। মঙ্গলবার দুপুর দুইটার দিকে তার মরদেহ ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয়। পরে বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে তার জানাজা হয়।
আজ মঙ্গলবার (৮ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে তার মরদেহ ক্যাম্পাসে নিয়ে আসা হয় এবং বুয়েটের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা সম্পন্ন হয়। জানাজায় বুয়েটের ছাত্র-শিক্ষক এবং ফারদিনের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। এর আগে তিনদিন নিখোঁজ থাকার পর তার মরদেহ সোমবার (৭ নভেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।
জানা গেছে, গত ৪ নভেম্বর (শুক্রবার) বিকেল তিনটার দিকে বুয়েটের উদ্দেশে বাসা থেকে বের হন ফারদিন। ৫ নভেম্বর (শনিবার) সকাল ১০টায় পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ডিপার্টমেন্টের পরীক্ষায়ও অংশ নেননি তিনি। তার বাড়ি নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার নয়ামাটি গ্রামে। বর্তমানে তারা রাজধানীর ডেমরার শান্তিবাগের ১৩/১২ নম্বর বাসায় থাকতেন।
জানা গেছে, গত চার বছর ধরে ওই তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে ফারদিনের। পাশাপাশি তারা একটি ডিবেট ক্লাবেরও সদস্য। ওই তরুণী ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী। ৪ নভেম্বর ঘোরাফেরার পর রাত সোয়া ১০টায় ওই তরুণী বাসায় ফিরে আসে বলে পুলিশকে তথ্য দিয়েছেন তিনি। সাধারণ ডায়েরি গ্রহণ করে ওই তরুণীসহ অন্যান্যদের সঙ্গে ফারদিনের মোবাইল কল রেকর্ডের সূত্র ধরেই তদন্ত করছে পুলিশ। কীভাবে ফারদিনের মৃত্যু হলো, সে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
রামপুরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী রফিকুল বলেন, ‘বুয়েটের শিক্ষার্থী নিখোঁজের ঘটনায় আমরা বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এরই মধ্যে তার বান্ধবী, যাকে রামপুরা ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে নামিয়ে দিয়েছিল ৪ নভেম্বর রাতে তাকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তাকেও আমরা সন্দেহের বাইরে রাখছি না।’
বুয়েটের ছাত্রকল্যাণ পরিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেন, সে শনিবার পরীক্ষায় বসার কথা ছিল, কিন্তু পরীক্ষা দেয়নি। তারপরই আমরা পরিবারের সঙ্গে কথা বলি এবং বিভিন্ন থানায় বিষয়টি জানিয়ে রাখি। বুয়েট পরিবারের জন্য এটা খুবই মর্মান্তিক একটা ঘটনা। প্রকৃত ঘটনা আমরা এখনো জানি না, পুলিশ বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে।
জানা গেছে, ময়নাতদন্তে ফারদিনের বুকে এবং মাথায় আঘাতের চিহ্ন পেয়েছেন চিকিৎসকরা। আঘাতজনিত কারণে তার মৃত্যু হয়েছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে বেশ কিছু উপাদান সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানা সম্ভব হবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
ফারদিন ডেমরার কোনাপাড়ায় এলাকায় বড় হয়েছেন। নারায়ণগঞ্জে তার ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া শেষে বাদ জোহর ফারদিনের বর্তমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বুয়েটে নিয়ে আসা হবে তার মরদেহ। সেখানেই প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। পরে মরদেহ তার আগের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ডেমরায় শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার পাগলা এলাকায় দাফন করা হবে।