সঠিক নৃত্যশিক্ষার জন্য সর্বোপরি নৃত্যের ওপর উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় লেভেল গুলোতে নৃত্য বিভাগ খোলা এখন সময়ের দাবী। আজকাল প্রায় সকল প্রকার অনুষ্ঠানেই নাচ থাকটা জরুরি। বিষয়টা বেশ ইতিবাচক। কিন্তু যখনই বলা হয় নাচের ওপর শিক্ষা নিতে তখনই যতো আপত্তি। নাচ তো শুধু বিনোদনের খোরাক নয়। নাচ তো মননশীল মানুষ গঠনের কারিগর। সত্যি বলতে নৃত্য আজকাল অনুষ্ঠান কেন্দ্রীক হয়ে পড়েছে। এটা যেমন ভালো বিষয় এর নেতিবাচক দিকও রয়েছে। কিছু মানুষের ধারণা যখন প্রোগ্রাম হবে নাচবো, এ নিয়ে পড়াশোনা করার কি দরকার আছে? নাচের ওপর পড়াশোনার আরেকটি যে বিষয় কাজ করে তা হলো আমার ভবিষ্যৎ কি? কথাটি কিন্তু ভুল নয়। তাই তো ভবিষ্যৎ কি? শিল্প ক্ষেত্রেও তো আজকাল নোংরামি চলে। আবার আরেকটা দিক সবাই তো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাবে না কিংবা সবার তো শান্ত-মারিয়াম এ পড়ার মতো সামর্থ্যও নেই। তাহলে উচ্চশিক্ষা নেবে কোথা থেকে? অপরদিকে যারা গ্রাজুয়েট হয়ে বের হচ্ছে তাদের চাকরির জায়গা কোথায়?
সবার পক্ষে তো দেশের বাহিরে এসে পড়াশোনা করাও সম্ভব নয়।এতোসব জটিলতার কারণে হতাশার কালো ছায়া আমাদের গ্রাস করছে পাশাপাশি গ্রাস করছে কিছু মানুষের নেতিবাচক মনোভাব নৃত্যশিল্পের প্রতি।
এসব থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে নৃত্যশিক্ষাকে সহজলভ্য করা। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে নৃত্য বিষয়ক বিভাগ খোলা। পাশাপাশি অন্যান্য ক্ষেত্রেও নৃত্যশিল্পীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। নৃত্য নিয়ে গবেষণা করবার যথাযোগ্য ব্যবস্থা করা।
স্কুল পর্যায়ে নৃত্য সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা দেওয়া।
এতে করে শাস্ত্রীয় নৃত্যের চর্চা আরো বেশি হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। নর্তক- নর্তকীরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবে।
নৃত্যের নান্দনিকতা যেমন আমাদের মুগ্ধ করে তেমনই ভাবে নৃত্যকে পেশা হিসেবে দেখবার দৃষ্টিভঙ্গিও আমাদের গড়ে তুলতে হবে।
রূঢ় বাস্তবতা হলো পেটে ভাত না থাকলে নান্দনিকতা কোথাও যেনো ফ্যাকাসে হয়ে যায়। কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে সুযোগ সুবিধে থাকলে নৃত্যকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করবার মানসিকতা অনেকের মাঝে গড়ে উঠবে। এতে করে একদিকে যেমন শিল্পচর্চার পরিধি টা বাড়বে পাশাপাশি বেকারত্ব অনেকাংশে কমে আসবে। বাস্তবতার নিরিখে নৃত্যশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখবার জন্য এর কর্মপরিধি বাড়ানো একান্ত ভাবে জরুরী হয়ে পরেছে।
আরেকটা দিক হলো মানসিকতার পরিবর্তন আনয়ন। নাচ নিয়ে যে পড়াশোনা করা যায় এবং এই শিক্ষার যে প্রয়োজনীয়তা রয়েছে সে জন্য সামাজিক প্রচার প্রচারণার যথেষ্ট দরকার রয়েছে। নৃত্যশিল্প সম্পর্কে মানুষের মাঝে কিছু বদ্ধমূল ধারণা কাজ করে সেগুলো দূর করবার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। যার মধ্যে নৃত্য করবার প্রতিভা রয়েছে তাকে নৃত্যশিক্ষা গ্রহণ করবার দায়বদ্ধতা আমাদের গড়ে তুলতে হবে পরিবার থেকে।
আর একটি দিক শাস্ত্রীয় নৃত্যকে ভালোবাসতে হবে। আপনি পশ্চিমা সংস্কৃতির কোন নৃত্য চর্চা করতেই পারেন কিন্তু নিজস্ব নৃত্যশৈলী কে উপেক্ষা করে নয়।
আমি যথেষ্ট আশাবাদী নৃত্যশিল্প নিয়ে। সঠিক পদ্ধতিতে সবকিছু গ্রহণ করা হলে নৃত্যশিল্প সুস্থ সমাজ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাবে।
প্রদীপ চন্দ্র কর
নৃত্য বিভাগ,দ্বিতীয় বর্ষ
রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়