aeafat

মালয়েশিয়ায় অপহৃত ঢাবি ছাত্রের বাবাকে উদ্ধারে নেপথ্যের নায়ক আরাফাত

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র সাজু মিয়ার সজীবের বাবা মোঃ হাফিজুর গত ১০ জুলাই রাতে মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশে নিজ কর্মস্থল থেকে অপহৃত হন। হাফিজুর মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশে অবস্থিত রায়ান সুরিয়া এন্টারপ্রাইজ নামক একটি কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। প্রতিদিনের মতো তিনি কাজ শেষ করে রাতে বাসায় ফিরে ক্লান্ত শরীরে ঘুমাতে যান। মাঝরাতে একটি অপহরণকারী চক্রের সদস্যরা তার রুমে এসে তাকে এবং সেখানে অবস্থানরত চার বাংলাদেশি শ্রমিককে অস্ত্রের মুখে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়।

অপহরণের পর হাফিজুর সহ অন্যান্য বাংলাদেশী শ্রমিককে অপহরণকারীরা বেধড়ক মারধর করে এবং হাত-পা বেঁধে তাদেরকে নির্মমভাবে প্রহার ও নির্যাতন করতে থাকে। অপহরণকারীরা মারধর ও নির্যাতনের এই ভিডিও ধারণ করে ভুক্তভোগীদের পরিবারের কাছে ইমোতে প্রেরণ করে। শুরুতে অপহরণকারীরা তাদের পরিবারের কাছ থেকে প্রত্যেককে মুক্তির বিনিময়ে ১০ লক্ষ টাকা হিসেবে দাবি করে।

অপহরণকারীরা হাফিজুরের স্ত্রীর কাছে ইমোতে ভিডিও কল‌ করে এবং তাকে ভিডিও কলে রেখে ঢাবি ছাত্রের বাবা মোঃ হাফিজুরকে বেধড়ক পেটাতে থাকে। অপহরণকারীরা তার স্ত্রীকে দ্রুত মুক্তিপণের টাকা তাদের একাউন্টে পাঠাতে বলেন।

এদিকে ঢাবি ছাত্র সজীবের পরিবারে তার বাবার অপহরণের ঘটনায় কান্নার রোল ভেঙ্গে পড়ে। সজীব তার সহপাঠীদের পরামর্শে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা প্রদানের ভার্চুয়াল প্লাটফর্ম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ গ্রুপে তার বাবার অপহরণের ঘটনাটি পোস্ট করে সহযোগিতা চায়।

পরবর্তীতে পোস্টটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্র ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা মঞ্চের কো-ফাউন্ডার আরাফাত চৌধুরীর নজরে এলে তিনি মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (কনস্যুলার) জনাব মোঃ মোরশেদ আলম ও কাউন্সিলর (লেবার) জনাব সৈয়দ শরিফুল ইসলাম কে ঢাবি ছাত্রের অপহৃত বাবা মোঃ হাফিজুর সহ অন্যান্য বাংলাদেশী শ্রমিকদের উদ্ধারে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।

এছাড়া তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাউথ ইস্ট এশিয়া উইংয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে মালয়েশিয়ার পুলিশের উপর কূটনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেন ।

আরাফাত চৌধুরীর অনুরোধে সাড়া দিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর (কনস্যুলার) জনাব মোঃ মোরশেদ আলম মালয়েশিয়ার পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেন এবং অপহৃত বাংলাদেশি শ্রমিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে উদ্ধার করার জন্য কূটনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করেন।

মালয়েশিয়ার পুলিশ অপহরণের অভিযোগটি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা শুরু করেন এবং ২৪ ঘন্টার মাঝে অপহৃত ৫ বাংলাদেশী শ্রমিককে জীবিত উদ্ধার করেন। এই ঘটনায় অপহরণকারী চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে মালয়েশিয়ার পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অপরাধীদের মালয়েশিয়ার পেনাং প্রদেশের নিবং তেবাল পুলিশ স্টেশনে আটক রাখা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ার আইনে অপহরণের মামলা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অপহরণকারী চক্রের ৪ সদস্য মালয়েশিয়ার কারাগারে রয়েছে। সেই সাথে মালয়েশিয়ার পুলিশ অপহরণকারী চক্রের সাথে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার করতে অভিযান পরিচালনা অব্যাহত রেখেছে।

এদিকে মালয়েশিয়ায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় ভুক্তভোগীরা জিম্মি দশা থেকে উদ্ধার হওয়ার পর প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ শেষে সকলেই সুস্থ রয়েছে। তাদের মুক্তি লাভের খবর শুনে পরিবারের সদস্যদের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্র সাজু মিয়া সজীব বলেন, আমার বাবা মালয়েশিয়ায় বৈধভাবে কাজ করেন। বাবাকে একদল লোক রাতের বেলা অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পর তারা বাবাকে প্রচুর মারধর করে এবং ভিডিও কলে আমার মাকে রেখে বাবাকে মারতে থাকে। দিশেহারা অবস্থায় আমি এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ গ্রুপে পোস্ট করি। এরপর আরাফাত চৌধুরী ভাই আমার সাথে যোগাযোগ করে।আমার বাবার বিস্তারিত তথ্য নিয়ে আরাফাত ভাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে আমার বাবাকে অপহরণকারীদের হাত থেকে উদ্ধার করার ব্যবস্থা করে দেয়। আরাফাত ভাই সার্বক্ষণিক আমার সাথে যোগাযোগ রেখেছেন‌ এবং আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছেন।

উল্লেখ্য, আরাফাত চৌধুরী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে ব্যাপকভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে গড়ে তুলেছেন “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা মঞ্চ” নামক একটি প্ল্যাটফর্ম। এই প্ল্যাটফর্মের বর্তমান সদস্য সংখ্যার প্রায় ৫৩ হাজার শিক্ষার্থী। আরাফাত চৌধুরী ২০২০ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা মঞ্চ এর মাধ্যমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা প্রদান করে আসছেন। এখন পর্যন্ত এই নিরাপত্তা মঞ্চের মাধ্যমে প্রায় সতের হাজার শিক্ষার্থী আইনি সহায়তা পেয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ববিদ্যা বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের ছাত্র সরফরাজ ইউসুফ বলেন, আরাফাত চৌধুরী ভাই আমাকে অনেক হেল্প করেছেন। আমার প্রতিবেশীরা আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে ও আমার পরিবারকে প্রচুর হয়রানি করে। পরবর্তীতে আমি আরাফাত ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলে ভাই কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ সুপারকে বলে আমাকে মিথ্যা মামলার হয়রানি থেকে রক্ষা করেন। এই মামলার কারণে আমি একটা সময় সরকারি চাকরি করার আশা ছেড়ে দিয়েছিলাম। মহান আল্লাহর অশেষ কৃপায় ও আরাফাত ভাইয়ের সহযোগিতায় আমি নির্বিঘ্নে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি গ্রহণ করছি এবং বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন দেখছি।

আরও পড়ুন

এছাড়া সাইবার ক্রাইম ভিকটিমদের সহায়তা করার লক্ষ্যে এবং তরুণদের মাঝে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাওয়ারনেস ও সাইবার লিটারেসি বৃদ্ধি করণের অভিপ্রায়ে আরাফাত চৌধুরী ২০২২ সালে “সাইবার এইড বাংলাদেশ” নামক একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। “সাইবার এইড বাংলাদেশ” এর মাধ্যমে ১৪০০ এর অধিক সাইবার ক্রাইম ভিকটিম আইনি সহায়তা পেয়েছে। তিনি সাইবার এইড বাংলাদেশ এর “ফাউন্ডার” এবং বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটির “চিফ লিগ্যাল এডভাইজার” হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

মর্নিং ট্রিবিউনের অফিসিয়াল ফেসবুক লিংক

আইনি সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি আরাফাত চৌধুরী শিক্ষার্থীবান্ধব, ইনোভেটিভ ও ক্রিয়েটিভ ইনিশিয়েটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য “Campus Buzz” নামক একটি অপরচুনিটি ফিড তৈরি করেছেন। তরুণদের অপার সম্ভাবনা বিকশিত করার লক্ষ্যে এই ওয়েবসাইটে স্কলারশিপ, ইন্টার্নশিপ, ফেলোশিপ, এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম, কনফারেন্স, কম্পিটিশন, অ্যাওয়ার্ড, জব অফারসহ বিশ্বের বিভিন্ন ধরনের অপরচুনিটির সমাহারে সমৃদ্ধ একটি একক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ ও আন্তর্জাতিক সংস্থায় চাকুরী করতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যাপকভাবে উপকৃত হচ্ছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দুর্যোগ, দুশ্চিন্তা, নিরাপত্তাহীনতার প্রশ্নে এক নির্ভরযোগ্য তরুণ আরাফাত চৌধুরী।শিক্ষার্থীদের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে তার নিরন্তর প্রচেষ্টা ঢাবি শিক্ষার্থীদের মুগ্ধ করেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *