#News#Bd#Morningtribune#

যেসব কারণে ফারদিনের আত্মহত্যা , জানালেন ডিবি প্রধান

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করা হয়নি। তিনি হতাশাগ্রস্ত ছিলেন এবং নারায়ণগঞ্জের কাঁচপুরের সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় রাজধানীর মিন্টুরোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিবি প্রধান হারুন বলেন, ‘তার (ফারদিন) স্পেন যাওয়ার কথা ছিলো, টাকা ম্যানেজ হয়নি। তার পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হচ্ছিলো। সবকিছু মিলেই মনে হয়েছে সে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলো।

ডিবি প্রধান বলেন, ‘অনেক দিন ধরে আমরা এর তদন্ত করছি। ঘটনার দিন তিনি ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেছেন। তিনি ওই রাতে এলোমেলো ঘুরে বেড়িয়েছেন। তার মানসিক সমস্যা ছিলো বলেই তিনি এরকম এলোমেলো ঘুরে বেড়িয়েছেন।’

‘ফারদিন ৪টা টিউশন করাতেন’ উল্লেখ করে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই টাকা দিয়ে তিনি নিজের ও ছোট ২ ভাইয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। তারপরও তার বাড়িতে শাসন ছিলো, তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার নির্দেশ ছিলো। হলে থাকা যাবে না। তিনি এক ধরনের চাপের মধ্যে ছিলেন, যেটা তিনি মানতে পারেননি।’

ফারদিনের গ্রামীণফোনের নম্বর ট্র্যাক করে তার অবস্থান ডেমরা সেতুর উপর অনুমান করা হয়েছে এবং এই লোকেশনটিতে তিনি লেগুনা থেকে নেমেছিলেন বলে লেগুনা চালক জানিয়েছিলেন। এই দুই লোকেশনের মধ্যে মিল পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করেন ডিবি প্রধান। আরও পড়ুন: বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন আত্মহত্যা করেছে: ডিবি

ডিবি কর্মকর্তা বলেন, ‘ফারদিন সাঁতার জানতো না। সবকিছু মিলে আমরা মনে করছি এটি আত্মহত্যা।’

হারুন বলেন, ‘ফারদিন নারায়ণগঞ্জের চানপাড়ায় কোনো অবস্থাতেই যায়নি। কাঁচপুরের সুলতানা কামাল ব্রিজ থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা ধারণা করছি। ব্রিজ থেকে পড়ে যে শব্দ হয় সে ব্যাপারে আমরা প্রমাণও পেয়েছি।’

ডিবি প্রধান বলেন, ‘ঘটনা রাতে তার বান্ধবী বুশরাকে রামপুরা ব্রিজে নামিয়ে দেয়ার পর রাত নয়টার দিকে কেরানীগঞ্জের একটি ব্রিজের কাছে গিয়েছিলো ফারদিন। এরপর সেখান থেকে জনসন রোডে যায়। এরপর গুলিস্তান হয়ে যাত্রাবাড়ীতে। এরপরে সেখান থেকে রাত দুইটার দিকে যাত্রাবাড়ী। দুইটা সাত মিনিটে লেগুনাতে উঠে। পরে দুইটা ৩৪ মিনিটে সুলতানা কামাল ব্রিজে যায়।’

ডিবির প্রধান আরও বলেন, ‘ফারদিন যেসব জায়গায় ঘোরাঘুরি করছে এগুলো পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি, সে একাই ছিলো। তার সাথে কেউ ছিলো না। এছাড়া সে যার যার সাথে কথা বলেছে তাদের সাথে আমরা কথা বলেছি।’

ফারদিনের বান্ধবী ইফাত জাহান মুমুর সঙ্গে মেসেঞ্জার ও টেলিগ্রামে কথোপকথন পুলিশের হাতে আছে উল্লেখ করে ডিবি প্রধান জানান, ‘সেসব কথোপকথনে ফারদিন তার হতাশার কথা ব্যক্ত করেছেন অনেকবার। মুমুর ভাষ্যমতে ফারদিন হতাশাগ্রস্ত ছিলেন। ফারদিন আত্মহত্যা করতে পারেন বলে মুমু মনে করেছিলেন।’

ফারদিনের সুরতহাল প্রতিবেদনে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যে ডাক্তার ময়নাতদন্ত করেছেন, তাদের সঙ্গে আমরা অনেকবার যোগাযোগ করি। ভিসেরা রিপোর্ট এখনো আসেনি। পূর্ণাঙ্গ মতামত তারা দেবেন। প্রাথমিকভাবে যে প্রতিবেদন দিয়েছে সেখানে মাথায় আঘাতের কথা বলা আছে। কিন্তু খুবই সামান্য আঘাত, যে আঘাতে সর্বোচ্চ অজ্ঞান হতে পারে বলে ডাক্তার জানান। যদিও মিডিয়ার সামনে বলে ফেলেছেন মাথায় অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন আছে। অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন থাকলে পুলিশের সুরতহাল রিপোর্টে উঠে আসতো।’

এরকম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীও উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরির পর আত্মহত্যা করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ফারদিনও এরকম একা একা ঘুরে বেড়িয়েছেন উদ্দেশ্যহীনভাবে। বুশরাকে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে নামানোর পর উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন এবং কারও সঙ্গে দেখা করেননি। ফারদিনের গত ১ বছরের ফোনের কল ডিটেইল রেকর্ড বা সিডিআর পর্যালোচনা করে আগে কখনো এমন দেখা যায়নি।’

দিকে, ফারদিন আত্মহত্যা করেছেন- ডিবি এমন তথ্য জানানোর আগে র‌্যাবের পক্ষ থেকে এ ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়ার কথা জানানো হয়। বুধবার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ নিহতের ঘটনায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এবং অগ্রগতি পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে বিস্তারিত পরে জানানো হবে।’

গত ৭ নভেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিন নূর পরশের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ-পুলিশ। এ ঘটনায় বান্ধবী বুশরাসহ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘হত্যা করে লাশ গুম’ করার অভিযোগে রামপুরা থানায় মামলা হয়।

ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানা বাদী হয়ে ওই মামলা করেন। মামলার পর গত ১০ নভেম্বর ফারদিন নূর পরশকে হত্যা করে মরদেহ গুম করার অভিযোগে রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে বুশরাকে গ্রেফতার করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *