
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলনের একটি ঐতিহ্য আছে।কেন্দ্রীয় সম্মেলন হবে হবে গুঞ্জন উঠলেই নেতাকর্মীদের মধ্যে উৎসব উৎসব ভাব দেখা যায়। এখানে একদিকে যেমন নবীন-প্রবীণের মেলবন্ধন হয় আবার তেমনি বেরিয়ে আসে নতুন নেতৃত্ব। প্রত্যেক সম্মেলনের আগেই কারা কারা নতুন নেতৃত্বে আসতে পারেন তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা-গুঞ্জন। বিশেষ করে সংগঠনের প্রধান দুটি পদ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে কারা আসতে পারেন সেদিকে থাকে সবার দৃষ্টি।
সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণার সময় থেকেই শুরু হয় পদ প্রত্যাশীদের জোর লবিং তদবির। নেতৃত্ব প্রত্যাশীদের মধ্যে কাজ করে এক ধরনের স্নায়ু চাপ। নিজ নিজ বলয়ে চলে লবিং গ্রুপিং। কে কতটা ত্যাগী, কার কতটুকু গ্রহণযোগ্যতা তা প্রমাণের জন্য নেতৃত্ব প্রত্যাশীরা হয়ে উঠেন মরিয়া।ছাত্রলীগের নতুন সম্মেলনের খবরে উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। একই সঙ্গে শুরু হয়েছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আড্ডার বিষয়বস্তু এখন ৩০তম সম্মেলনকে ঘিরে। বয়সের কারণে যারা প্রার্থী হতে পারবেন না তাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সাবেক হওয়ার ক্ষণ গণনা। রাজনীতিতে কাঙ্ক্ষিত ক্যারিয়ার গড়তে না পেরে চাকরির বয়স পার করে আবার অনেকে ডুবছেন হতাশায়।
শুক্রবার (২৮ অক্টোবর) বিকালে দলটির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মেয়াদোত্তীর্ণ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ দ্রুত ঠিক করার নির্দেশ দিয়েছেন । বৈঠকে উপস্থিত থাকা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের একাধিক সদস্য এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এ প্রসঙ্গে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল গণমাধ্যমকে জানান , আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের আগেই দলের মেয়াদোত্তীর্ণ সব সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সম্মেলন সম্পন্ন করা হবে। নেত্রী দলের সাধারণ সম্পাদককে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছেন।
শীর্ষ পদ প্রত্যাশীরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করছে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাদের বাসায় গিয়ে সাক্ষাৎ করতে করতে । সব পদ প্রত্যাশীদের একটাই উদ্দেশ্য যেকোন উপায়ে প্রধানমন্ত্রীর কান পর্যন্ত নিজের নাম টা পৌঁছানো।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পদপ্রত্যাশী নেতা বলেন, নির্বাচনের আগে সাহসী, বিচক্ষণ, দক্ষ নেতা তৈরি করতে কাউন্সিলের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে।
‘অনেক সময় সিনিয়র-জুনিয়র না মেনেই নেতা নির্বাচন করা হয়। ঊর্ধ্বতন নেতাদের কাছে যাকে যোগ্য বলে মনে হয় তাকেই নির্বাচিত করা হয়।
তিনি বলেন, ‘বিগত কমিটি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে অনেক সিনিয়রদের কেউ কেউ এসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কমিটিতে। আবার জুনিয়রদের অনেকে সুযোগ পেয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে।’
তবে ছাত্রলীগের কাউন্সিলের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ বলছে, পরিশ্রমী ও মেধাবী এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে জনপ্রিয়, পরিচ্ছন্ন ইমেজ, সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতারা এগিয়ে থাকবেন। বিশেষ করে বিগত দিনগুলোতে যারা সরাসরি মাঠে থেকে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে; তারাই এগিয়ে থাকবে পদ পাওয়ার দৌড়ে।
টেন্ডারবাজ ও নানা অপকর্মে জড়িতদের নেতৃত্বে আসার সুযোগ নেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে ওই নেতারা জানান, যেহেতু সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন; তাই এমন নেতা নির্বাচন করা হবে যাতে নির্বাচনকালীন সময়ের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন করতে পারে।
তাছাড়া প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনারও নির্দেশনা রয়েছে; বিতর্কিতরা যেন ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে না আসতে পারে।
মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি নিয়ে অসন্তোষ:
ত্রলীগের গঠনতন্ত্রের দ্বিতীয় ভাগের ১১ ধারার (খ) তে বলা আছে, কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের কার্যকাল ২ বছর। উপরোক্ত সময়ের মধ্যে সম্মেলন আয়োজন করতে হবে। অন্যথায় নির্বাহী সংসদের কার্যকারিতা লোপ পাবে। (গ) তে বলা হয়েছে, বিশেষ বা জরুরি অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় কমিটির বর্ধিত সভায় অনুমোদন সাপেক্ষে কমিটির কার্যকাল ৩ মাস বৃদ্ধি করা যাবে। উক্ত সভায় প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সদস্যবৃন্দ যোগ দেবেন।সে হিসেবে ছাত্রলীগের চলমান কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়ে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছে সংগঠনের একটা বড় অংশ।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের ১১ ও ১২ মে ছাত্রলীগের সম্মেলন হয়। ৩১ জুলাই আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্মতিতে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে ছাত্রলীগের কমিটি করা হয়।
কেন্দ্রীয় কমিটির মেয়াদ ১ বছর না পেরোতেই তাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠে। আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের একাধিক নেতাসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে নানা ধরনের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কথা ওঠে আসে।
আসে নানান ঘটনার পর সেই কমিটির সভাপতি ও সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়া হয় ২০১৯ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। এরপর ভারপ্রাপ্ত হয়ে দায়িত্বে আসেন আল নাহিয়ান খান জয় এবং লেখক ভট্টাচার্য। সাড়ে তিন মাস পর ২০২০ সালের ৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে ‘ভারমুক্ত’ হন জয়-লেখক। তবে তারা ভারমুক্ত হলেও ঝামেলামুক্ত হয়নি ছাত্রলীগ। প্রেস রিলিজে কমিটি গঠন, বিবাহিত -চাঁদাবাজ-মাদকসেবিদের কমিটিতে আনা, বছরের পর বছর পদ আঁকড়ে থাকাসহ নানান অভিযোগে টালমাটাল ছাত্রলীগ। সংগঠনটিতে এবার শুরু হয়েছে সম্মেলন নিয়ে ধোঁয়াশা।
তাই সাধারণ নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা ,‘সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন কমিটি হবে এবং এই কমিটিতে যাতে কোন অপরাধী এবং বিতর্কিতরা যাতে নেতৃত্বে না আসতে পারে।’
