ঢাবি শিক্ষার্থী কর্তৃক ঢামেকের ইন্টার্ন চিকিৎসককে বেদম মারধর

গতকাল ৮ই আগস্ট রাত নয়টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের এক ইন্টার্ন ডাক্তারকে মারধরের ঘটনাঘটেছে। মারধরকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি ঘটনার বিস্তারিত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে আইডিতে তুলে ধরেছেন। ঘটনাটি হুবহ তুলে ধরা হলো

রাত ৯ঃ৩০ এর ঘটনা।

দুপুর পর্যন্ত সায়কিয়াট্রি ডিপার্টমেন্টে ডিউটি করেছি। বিকালে ঘুম দিয়ে সন্ধ্যা ৭টায় কলেজের রীডিং রুমে পড়তে আসছি। ৯টারদিকে ভাবলাম একটু ঘুরে আসি।

শহীদ মিনারে গেলাম।মূল বেদির পাশে(উপরে না)মাটির ওপরের রেলিংয়ে বসে বসে বাদাম খাচ্ছিলাম।

কয়েকটা ছেলে এসে বললো ভাই পরিচয় কি?

বললাম আমি ঢাকা মেডিকেলের।

কোন ইয়ারে পড়েন?

আমি বললাম আমি ইন্টার্ন ডাক্তার হিসাবে আছি।

এরপর আইডি কার্ড চাইল। বললাম সাথে ব্যাগ নাই।আইডি কার্ড তো সবসময় সবাই সাথে নিয়ে ঘুরি না।

এরপর বললোকেন নাই? চিল্লাতে চিল্লাতে বললো আমার সাথে তো ঢাবির আইডি কার্ড  আছে।

আমি বললাম ভাই ক্যাম্পাসের পাশেই তো আসছি। আইডি কার্ড কি সবাই সাথে নিয়ে ঘুরে?

এই প্রশ্ন করার৷ সাথে সাথে  থাপড়ানো শুরু করলো। টা থাপ্পড়ের অবাক হয়ে বললামভাই কি করলাম আমি।

এই কথা বলার পরে শুরু হইল দ্বিতীয় দফায় মাইর। এরপর আরো জন আসলো। আমার নাকি  এটিচুড প্রবলেম হেনতেন।

এইটা ঢাবির ক্যাম্পাস, আমি এইখানে কি করি।  বলে যতক্ষন পারলো মাইর চললো। আমার মুখে মাস্ক ছিল। টেনে ছিড়েফেললো।কানের নিচে মারার পরে মাথা ঘুরানো শুরু করলো।।আমি বসে পরলাম,এরপর মাথায় লাথি মারা হইল। আমারমাথায় সেন্ডেলের বালি পর্যন্ত লেগে ছিল।

আমি কেন এখনো যাই না এখান থেকে এইটা বলে চিল্লাইতে চিল্লাইতে ইচ্ছামত মারা হইল। আল্লাহ সাক্ষী এতকিছুর পরেওআমি একটা সিঙ্গেল গালিগালাজও করিনাই। খালি বলছি আল্লাহ বিচার করবে।

রিক্সা নিয়ে বক্সিবাজার সিগনালের গেইটে ফিরলাম। রুমমেটকে ফোন দিলাম। সে এসে রুমে নিয়ে গেল।

এক কানে কম শুনতেসি এরপর থেকে,নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছিল। মাড়িও কেটে গেছে দাঁতের। গালের পাশে ফুলে আছে। চোখডান পাশেরটা লাল হয়ে আছে।

ইমার্জেন্সীতে গেলাম। পুলিশ কেইস সীলসহ ইঞ্জুরি নোট লিখল। ইএনতে রেফার করলো। নাক দেখে বললো নাকের সেপ্টামইঞ্জুর্ড হয়েছে।

কান দেখে বলছে কানের পর্দায় ব্লিডিং স্পট আছে,হিয়ারিং লস আছে কিনা বুঝতে পরশু অডিওগ্রাম করতে হবে।

ইন্টার্নশীপে জয়েন করার পর থেকে ঢাবির/বুয়েটের অনেক স্টুডেন্টই হাসপাতলে আসতে দেখসি। যতটুকু হেল্প করার চেষ্টা করসি।স্যারদের কাছেও রোগীর কোন দরকারে গেলে বলছি স্যার রোগী ঢাবির স্টুডেন্ট। পাশের ক্যাম্পাস,নিজেদের লোক ভেবেই এইটাকরতাম।

আজকে সবকিছুর প্রতিদান পাইলাম।

পুরা জীবদ্দশায় কারো সাথে মারামারি করসি বলে মনে পরে না। আমি হলে আছি আজকে বছর ধরে।যারা চিনেন তারাজানেন কতটুকু নম্রতার সাথে চলতে চেষ্টা করি। এরপরেও রক্ষা পাইনাই এমন অভিজ্ঞতা থেকে।

যেই শহীদ মিনার প্রথম বানানো হইসিল ঢামেকের হলে,ঢামেকের স্টুডেন্টদের দ্বারা সেই শহীদ মিনারে ঢামেকের পরিচয় দেওয়ারপরেও এইভাবে মাইর খাওয়া লাগল।আমি কোনদিন শহীদ মিনারকে আমার ক্যাম্পাসের বাইরের কিছু ভাবি নাই। এমনকিঢামেকের আউটডোর গেইটের নামও শহীদ মিনার গেইট।

কি চমৎকার দেশে বাস করি এইটাই ভাবতেছি। যখন তখন যে যারে পারতেছে এতগুলা মানুষের সামনে মারতেসে। মানুষও মজা দেখতেসে। একটা সিংগেল মানুষও প্রতিবাদ করে নাই।

আহা কি সুন্দর!”

বিষয়ে অভিযোগকারীর সাথে কথা বললে তিনি আইনি সহায়তা নিবেন বলে প্রতিবেদককে জানান।

এবিষয়ে  ঢাবি প্রক্টর কে এম গোলাম রব্বানীর সাথে কয়েকবার ফোন করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *