ষড়যন্ত্রকারীদের গভীর চক্রান্তে চাকুরী হারাচ্ছেন দক্ষ ও পেশাদার কূটনীতিক জসীম উদ্দীন

নিজস্ব সংবাদদাতা

দেশ  যখন “মানবিক করিডোর” নিয়ে বিভ্রান্তি ও বিতর্কের মধ্যে আছে, তখন বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো একটি সংবাদ সারা দেশকে নাড়া দিল। ২৭তম পররাষ্ট্র সচিব মো: জসীম উদ্দিন শিগগিরই চাকরি হারাতে চলেছেন—এমনটাই আলোচিত হচ্ছে। তবে কেন এমন সংকটময় মুহূর্তে সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা এখনও পুরোপুরি পরিষ্কার নয়। যদিও বিশ্লেষকরা এর কারণ নিয়ে নানা অনুমান করছেন।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পররাষ্ট্র সচিব মো: জসীম উদ্দিন একাধিক আক্রমণের শিকার হন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ভিডিও ও তথ্যচিত্র ছড়িয়ে দেওয়া হয়, যা ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে চলে যায়। এসব সমালোচনার বেশিরভাগই ছিল অমূলক। এ সকল ভিত্তিহীন সমালোচনায় সচিব পদে কোনো পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যায়নি। কারণ, একটি দেশের পররাষ্ট্র সচিবের ভূমিকা রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জাতীয় অস্থিরতার সময়, যখন সরকার নানামুখী চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয় এবং অনিশ্চয়তা বিরাজ করে, তখন পেশাদার সরকারি কর্মকর্তাদের দৃঢ় নেতৃত্বই স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। মো: জসীম উদ্দিন এ দায়িত্ব পেশাদারিত্বের সঙ্গে পালন করে সর্বত্র প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
গণ-অভ্যুত্থান ও সরকার পরিবর্তনের পর অনেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যখন নেতৃত্ব সংকটে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে, তখনও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার কাজ নির্বিঘ্নে চালিয়ে গেছে। এ সাফল্যের পেছনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো: তৌহিদ হোসেন ও পররাষ্ট্র সচিব মো: জসীম উদ্দিনের নেতৃত্বের বড় অবদান রয়েছে। তাঁদের নীতিগত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ ভূমিকা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থান সুরক্ষিত রাখতে সহায়তা করেছে।
দেশের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতার মধ্যেও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আন্তর্জাতিক মহল থেকে স্বীকৃতি ও সমর্থন পেয়েছে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে আসেনি; বরং কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও কৌশলগত সমন্বয়ের ফলস্বরূপ সরকার এ সাফল্যে পায়।
মো: জসীম উদ্দিন ১৯৯৪ সালে ১৩তম বিসিএস ব্যাচের মাধ্যমে পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগ দেন। তিন দশকের কর্মজীবনে তিনি ওয়াশিংটন ডিসি, নয়াদিল্লি, টোকিও ও ইসলামাবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি চীন, কাতার ও গ্রিসে রাষ্ট্রদূত হিসেবেও কাজ করেছেন। প্রতিটি জায়গায় তার দক্ষতা ও নীতিগত অবস্থান তাকে একজন সফল কূটনীতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
তাঁর নেতৃত্বে গ্রিসে বাংলাদেশের দূতাবাস “বছরের সেরা মিশন” হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সেখানে তিনি অবৈধ অভিবাসীদের বৈধতা প্রদান, অনলাইন বাংলা ভাষা কোর্স চালু, কনস্যুলার সেবা আধুনিকীকরণ, এবং বাংলাদেশি খাবার ও সংস্কৃতি প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন।
তবুও, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে “জনপ্রশাসন পদক” পাওয়ার কারণে তাকে তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হতে হয়। যদিও এই পুরস্কার তার ব্যক্তিগত নয়, বরং মিশনের সম্মিলিত সাফল্যের স্বীকৃতি।
সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, “মানবিক করিডোর” নিয়ে তার বিরোধিতার কারণেই তাকে পদ থেকে সরানোর প্রক্রিয়া চলছে। এ তথ্য সত্য হলে, এটি তার জাতীয় স্বার্থ রক্ষার প্রতিশ্রুতি ও বিদেশি চাপে নতি স্বীকার না করার উদাহরণ।
এমন একজন অভিজ্ঞ নেতার অপসারণ, বিশেষত ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে আঞ্চলিক উত্তেজনার সময় এবং দেশের অভ্যন্তরীণ বিভ্রান্তির মধ্যে, মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। দেশ ও বিদেশের কূটনীতিক এবং আন্তর্জাতিক মিশনগুলো এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ দেশের কূটনৈতিক অবস্থানে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব ফেলতে পারে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *