ধর্মীয় ডেস্কঃ
‘শবে বরাত’ ফারসি ভাষার শব্দ। শব মানে রাত; আর বরাত মানে মুক্তি। কোরআন-হাদিসে ও তাফসিরের গ্রন্থগুলোতে শবে বরাত শব্দটি নেই। তবে ভিন্ন নামে, ভিন্ন শব্দে ও ভিন্ন পরিভাষায় এই রাতের আলোচনা এসেছে।
কোরআনের পরিভাষায় শবে বরাতকে ‘লাইলাতুম মুবারাকাহ’ বলা হয়। হাদিসের ভাষায় বলা হয়- ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ১৫ শাবানের রাত। এ রাতে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি মনোযোগ দেন; ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করে দেন।
ইবাদত-বন্দেগি একাকী করণীয়:
গোটা রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি করতে পারলে ভালো। না হয়, রাতের বেশির ভাগ সময় ইবাদতে কাটানোর চেষ্টা করতে হবে। তা-ও সম্ভব না হলে শেষ রাতের সময়টুকুতে কিছুতেই অবহেলা করা উচিত নয়। পাশাপাশি এ বিষয়টি খুব খেয়াল রাখতে হবে যে, রাতের নফল ইবাদতের কারণে যেন ফজরের ফরজ নামাজ কোনোভাবেই ছুটে না যায়।
বিশুদ্ধ মতানুসারে শবে বরাত ও শবে কদরের নফল আমলগুলো একাকী করণীয়। ফরজ নামাজ অবশ্যই মসজিদে জামাতের সঙ্গে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। বিভিন্ন হাদিস থেকে এ রাতে দীর্ঘ নামাজ পড়া, সিজদা দীর্ঘ হওয়া, দোয়া-ইস্তেগফার করার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে। (শুআবুল ঈমান, বায়হাকি : ৩/৩৮২, ৩৮৩)
আইয়ামে বিজের রোজা রাখা:
সবার মনে রাখতে হবে, শাবান মাসজুড়ে রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত রয়েছে। হাদিস শরিফে এ ব্যাপারে বেশ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম (সা.)-কে শাবান মাসের মতো এত অধিক (নফল) রোজা আর অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প কয়েক দিন ছাড়া বলতে গেলে সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৩৭)
এছাড়াও ‘আইয়ামে বিজ’ বা প্রতি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখার ব্যাপারেও হাদিস শরিফে উৎসাহিত করা হয়েছে। এটা রাসুল (সা.)-এর সুন্নত।
শবে বরাতের রোজা কখন?
১৫ শাবান শবে বরাত। একটি হাদিসে এই রাত পরবর্তী দিনে রোজা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। আলী (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘১৫ শাবানের রাত যখন হয়, তোমরা রাতটি ইবাদত-বন্দেগিতে পালন করো এবং দিনের বেলা রোজা রাখো। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ প্রথম আসমানে এসে বলেন, কোনো ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব। কোনো রিজিক অন্বেষণকারী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দেব। আছে কি কোনো রোগাক্রান্ত? আমি তাকে আরোগ্য দান করব। এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা উল্লেখ করে তাদের ডাকতে থাকেন।’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৩৮৮)
শবে বরাতে যেসব কাজ করবেন না:
শবে বরাতে নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়া। এই ধরনের কোনো আমলের প্রমাণ হাদিস শরিফে নেই। আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। তবে কোনো প্রকার ঘোষণা বা আহ্বান ছাড়া মানুষজন যদি মসজিদে একত্র হয়ে যায়, তাহলে তারা একাকী ইবাদত করতে পারে। এতে কোনো সমস্য নেই।
লক্ষণীয় যে, এক শ্রেণির যুবক আছে— তারা এ রাতে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে রাস্তায় সময় কাটায়, উচ্চ স্বরে জিকির করে; অথচ ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো সম্পূর্ণ বর্জনীয়। কারণ এতে কোনো রোগাক্রান্ত ব্যক্তির কষ্ট হতে পারে। আর অন্যকে কষ্ট দিয়ে নফল ইবাদত করার কোনো বিধান শরিয়তে নেই।
পটকা বাজানো, খিচুড়ি পাকিয়ে বণ্টন করা; মিষ্টি, হালুয়া ও শিরনি বিতরণ; মসজিদে একত্র হয়ে ইবাদত, জিকির, আতশবাজি, চেরাগপ্রথা ও কবরস্থানে মেলার মতো গমনাগমন ইত্যাদি সুস্পষ্ট বিদআত ও কুসংস্কার। (বিচারপতি মুফতি তাকি উসমানি, ইসলাহি খুতুবাত : ৪/৮৫)
সম্পাদক: ড. রহমান মাসুক অফিস: ১২৯,এলিফ্যান্ট রোড, ঢাকা-১২০৫। ফোন ও ইমেইল (নিউজরুম): ০১৫৫৮১০৪১৬১; morningtribune@yahoo.com
Copyright © 2025 Morning Tribune. All rights reserved.