ঢাবি প্রতিবেদকঃ
রমজান মাস মুসলমানদের জন্য ইবাদতের অন্যতম মাস। ত্রিশ দিন ভোররাতে সেহরি করে সারাদিন রোজা রেখে সন্ধ্যায় ইফতার করেন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলমান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোর আবাসিক শিক্ষার্থীদের জীবনও এর বাইরে নয়। ঢাবির ১৯ টি হলের মধ্যে জগন্নাথ হল ব্যতীত বাকি ১৮ টি হলেই মুসলমান শিক্ষার্থীরা থাকেন। তারা জানান, হলের খাবারের দাম ও মান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন অনেকেই।রমজান’কে পুঁজি করে বেশি মুনাফা লাভের আশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ খাবারের দাম বাড়ানো হলেও, বিন্দুমাত্র বাড়ে নি খাবারের মান। সেই সঙ্গে প্যাকেজ করে খাওয়ানোর মাধ্যমে বেশি টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে খাবার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। কম টাকায় সেহরি খেতে ভোরে এক হল থেকে আরেক হলে ছুটতে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী’কে।
কয়েকটি হল সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়টির হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, মাস্টার’দা সূর্য সেন হল,কবি জসীম উদ্দিন হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে প্রায় সব খাবারের দাম আগের থেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। এক লাফে গরু ও খাসির মাংস,ভাত ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকায় দাঁড়িয়েছে , গরুর মাংস ও ভাত ৬০ টাকা থেকে ৮০ টাকায়, মুরগির মাংসের ভুনা ও ভাত ৫০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকায়, মাছ ৪০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০-৭০ টাকা, সবজি ৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০ টাকা। একটু ভালো মানের খাবারের আশায় অনেক শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ও হলের খাবারের দোকানগুলোতে খায়। সেখানেও খাবারের দাম বেড়েছে আগের তুলনায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী প্রশাসনের অবহেলা’কে দায়ী করে মর্নিং ট্রিবিউন’কে বলেন, ক্যান্টিন গুলোতে প্যাকেজ করে খাবারের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে মাংস খেতে ৪৫-৫৫ টাকা লাগত সেখানে একটা ডিম (পুরো ডিমের এক তৃতীয়াংশ), ডাল (যেটির মূল্য রমজান আসার আগে যুক্ত ছিল না) দিয়ে খেতে ৮০ টাকা লাগছে।সেহরির খাবারের পেছনেই এমন ব্যয় হওয়াতে ইফতারি ও রাতের খাবার খেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।
ওই শিক্ষার্থী প্যাকেজে খাবার বিক্রি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, খাবারের পৃথক পৃথক মূল্য রাখা হোক। যার যেটি প্রয়োজন হবে, সে সেটি খাবে। অহেতুক ডিম, সবজি এসব দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার মানে হয় না।
খাসির মাংস ও ভাত ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকা,গরুর মাংস ও ভাত ৫৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা, মুরগির মাংসের ভুনা ও ভাত ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, মাছ ৪০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ টাকায়।
এদিকে ক্যান্টিন ও দোকানের খাবারের মালিকদের দাবি জিনিস পত্রের দাম বেড়েছে, তাই খাবারের মূল্যও বেড়েছে। কেন প্যাকেজ করে খাবারের মূল্য বেশি রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে অধিকাংশ ক্যান্টিন ও দোকান মালিকরাই বলেন, ‘অন্যরা তো এভাবেই খাওয়াচ্ছে, তাই আমরাও খাওয়াচ্ছি। তাছাড়া রোজা-রমজান মাস ; ভাল মন্দ তো খাওয়া উচিত।’
রমজানে খাবারের এমন অস্বাভাবিক দাম রাখার কারণ জানতে চাইলে মুহসিন হলের ক্যান্টিন মালিক আলমগির হোসেন বলেন, বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। তাই স্বভাবতই আমাদের দাম বেশি রাখতে হচ্ছে। তাছাড়া রমজান উপলক্ষে ছাত্রদের আরেও ভালো খাবার নিশ্চিত করতে হয়; তাই খরচও পড়ে বেশি। খাবারের দাম কমলে আমরাও দাম কমাব।
তবে দিনের ব্যবধানে খাবারের মিলপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, গরুর মাংসের দাম অনুসারে কমটাই রাখার চেষ্টা করছি। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে ছাত্রদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দাম বাড়াতেই হচ্ছে আমাদের।
এফআর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী তামিম জানান, পরিবারের আর্থিক সংকটে টিউশনি করে নিজের খরচ নিজেই চালান। কিন্তু রমজান মাসে খাবারের দাম বাড়ায় অতিরিক্ত দামে খাবার খাওয়া তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। এভাবে আর কত চলবে এমন চিন্তা পেয়ে বসেছে তাকে।
এ ব্যাপারে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বলেন, আসন্ন প্রভোস্ট কমিটির মিটিংয়ে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করব।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া সম্ভব হয় নি।