নবম ব্যাটস ম্যান হিসেবে যখন আউট হয়ে ফিরেছেন ইবাদত তখনও বাংলাদেশ জয় থেকে ৫১ রান দূরে! সেখান থেকেই অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে প্রায় একা হাতে টাইগারদের অবিস্মরণীয় জয় এনে দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এ সময়ে তাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান।
ভারতের বিপক্ষে এ ম্যাচে বাংলাদেশের জয় এসেছে এক উইকেটের ব্যবধানে। আর এতে করে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেলো টাইগাররা।
রোববার (৪ ডিসেম্বর) ম্যাচে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক লিটন দাস। ইনিংসের ২৩ রানেই ওপেনার শিখর ধাওয়ানকে ফেরান মেহেদি হাসান মিরাজ।
এরপর বিরাট কোহলির সঙ্গে নিয়ে দলীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা জুটি গড়ার চেষ্টা করেন। তবে তাদের জুটিকে বড় হতে দেননি টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। ইনিংসের ১১তম ওভারে প্রথমবার বোলিংয়ে এসেই ভারতীয় ব্যাটিং লাইনআপের দুই স্তম্ভকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন সাকিব।
প্রথমে সরাসরি বোল্ড করেন ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে। এরপর কোহলিকে যে বলটাতে ফেরান, সেখানে টাইগার অধিনায়ক লিটন দাসেরও অবদান রয়েছে। বিরাট কোহলির রকেট গতির শট ঈগল পাখির মতো ছো মেরে তালুবন্দি করেন লিটন।
শুরুতেই তিন উইকেট হারিয়ে বিপর্যস্ত ভারতের হাল ধরেন শ্রেয়াস আইয়ার ও লোকেশ রাহুল। দলীয় ৯২ রানে এই জুটি ভাঙেন এবাদত হোসেন। শ্রেয়াস ৩৯ বলে ২৪ রান করেন।
এরপর যখন ওয়াশিংটন সুন্দরকে নিয়ে জুটি গড়ছিলেন ভারতীয় ব্যাটার কেএল রাহুল। তখন ৩৩তম ওভারে আবার সাকিবের হাতেই বল তুলে দেন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। সাকিব এবারও হতাশ করেননি। সুন্দরকে এবাদত হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে ভাঙেন ভারতের ৬০ রানের জুটি।
এক রান পরেই সাকিবকে ক্যাচ দিয়ে এবাদত শাহবাজ আহমেদকে শূন্য রানে ফেরান। এর পরের ওভারেই আবার সাকিবের জোড়া শিকার। ৩৪তম ওভারের প্রথম বলে শারদুল ঠাকুরকে বোল্ড করেন। এরপর একই ওভারের চতুর্থ বলে দিপক চাহারকে ফিরিয়ে পাঁচ নম্বর উইকেট তুলে নেন।
সাকিব, এবাদতের বোলিং নৈপুণ্যে ভারতের ইনিংস থামে মাত্র ৪১.২ ওভারে, ১৮৬ রানে। সাকিবের ৫ উইকেটের পাশাপাশি এবাদত তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট তুলে নিয়েছেন। এছাড়া মিরাজ পেয়েছেন ১ উইকেট।
ভারতের দেওয়া ১৮৭ মামুলি লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ইনিংসের প্রথম বলেই ফিরে যান নাজমুল হোসাইন শান্ত। এরপর তিন নম্বরে নামা এনামুল হক বিজয়ও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। ইনিংসের দশম ওভারে দলীয় ২৬ রানে তিনি ফিরে গেলে চাপে পড়ে বাংলাদেশ।
এরপর চারে নামা সাকিবকে নিয়ে প্রাথমিক চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক লিটন কুমার দাস। তবে ইনিংসের শুরুতে রান করতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছিলেন তিনি।
এরপর শুরুর অস্বস্তি কাটিয়ে স্বাভাবিক ব্যাটিং করা শুরু করেন লিটন। তবে অস্বস্তি কাটালেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দলীয় ৭৪ রানে ব্যক্তিগত ৬৩ বলে ৪১ রানে ভারতীয় স্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দরের বলে ক্যাচ হয়ে ফেরেন তিনি।
এরপর দলীয় ৯১ রানে সাকিব ফিরলে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। এরপর মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিম মিলে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন বাংলাদেশের ইনিংস। কিন্তু ৩৪তম ওভারের শেষ বলে মাহমুদউল্লাহ ও ৩৫তম ওভারের শেষ বলে মুশফিক ফিরলে বিপদে পড়ে টাইগাররা।
১২৮ রানে মুশফিক ফেরার পর মাত্র আট রানে তিন উইকেট হারিয়ে খাঁদের কিনারায় চলে যায় বাংলাদেশ। এর মধ্যে শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে ফিরে আফিফও! তখনও বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫১ রান।
এরপর প্রায় একা হাতে বাংলাদেশকে ম্যাচে রেখেছিলেন মিরাজ। ব্যাট হাতে ৩৯ বলে চার চার ও দুই ছক্কায় ৩৮ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে দলকে জয়ের বন্দরে পৌছে দিয়েই মাঠ ছাড়েন তিনি। এ সময়ে মিরাজকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন মোস্তাফিজ। তার ব্যাট থেকে এসেছে ১১ বলে ১০ রানের মহামূল্যবান ইনিংস।