মহিউদ্দিন রনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। এর আগে গত এপ্রিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রের আধুনিকায়নের দাবিতে অনশন করেন তিনি। গত ৫ এপ্রিল মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় বাঁ পা এবং কোমরের আঘাত নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মুর্তজা মেডিক্যাল সেন্টারে ভর্তি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি।
মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা না পেয়ে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি, অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে ২ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করেছিলেন তিনি। ভিডিও বার্তা দেখে তার হলের প্রভোস্ট, পরিবারের সদস্যরা এবং হলের বড় ভাইয়েরা তাকে স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিতে চাইলে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে মেডিকেল সেন্টারেই অনশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি।
তাই নিজের পা উৎসর্গ করে হলেও মেডিকেলের আধুনিকায়ন চেয়ে ৬ দফা দাবিতে মেডিকেলেই অনশনে বসেছিলেন তিনি। অবশেষে তার দাবির বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান মহিউদ্দিন রনিকে ডাবের পানি খাইয়ে দীর্ঘ ৭৭ ঘন্টার অনশন ভাঙ্গিয়েছিলেন।
তার দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে উপাচার্য বলেছিলেন, ইতোমধ্যেই কিছু দাবির বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি দাবিগুলো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। আর আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত নতুন একটি ভবন দুই বছরের মধ্যেই নির্মাণ করা হবে।
তার ৬ দফা দাবিগুলো ছিল:
১. মেডিকেল সেন্টারের এন্ট্রি পয়েন্টে ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন করতে হবে।
২. প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য আধুনিক লিফ্ট, র্যাম্প, হুইল চেয়ার ও অন্যান্য এক্সেসোরিজ প্রদান করতে হবে।
৩. মেয়ে শিক্ষার্থীদের অন্তর্বর্তীকালীন শারীরিক সমস্যার সকল চিকিৎসা ও প্রয়োজনীয় টিকা প্রদান করতে হবে।
৪. অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় আধুনিক চিকিৎসা সামগ্রী ও ওষুধ প্রদান এবং প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট বা মেশিন স্থাপন করতে হবে।
৫.অতিদ্রুত মেডিকেল সেন্টার কর্তৃক নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার প্রদান ও ক্যান্টিন স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে।
৬. অতিদ্রুত হাইকমোড, তথা হাইলি ডেকোরেটেড স্যানিটেশন সিস্টেমে টয়লেট, বাথরুম তৈরি করতে হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের বিরুদ্ধে অনিয়ম, অব্যবস্থাপনার অভিযোগ নতুন নয়। এবার এই অব্যবস্থাপনার বিরুদ্ধে আঙুল তুলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। টানা ১৩ দিন ধরে অনশন কর্মসূচি পালন করেছেন ঢাবি শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। এই অব্যবস্থাপনা দূর করতে রেলওয়ের কাছেও আবেদন জানিয়েছেন তিনি। এমনকি অভিযোগ করেছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরেও।
রনির ছয় দফা দাবিতে আছে—
- টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ ডট কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
- যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।
- অনলাইনে কোটায় টিকেট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে। সেই সাথে অনলাইন-অফলাইনে টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্বসাধারণের সমান সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।
- যাত্রী চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
- ট্রেনের টিকেট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়কসহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকাণ্ড সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেল সেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।
- ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
ইতোমধ্যে তার অবস্থানের কারণ জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। বুধবার (২০ জুলাই) হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের নেতৃত্বাধীন দ্বৈত বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে রনির বিষয়ে তথ্য জানানোর জন্য বলেন আদালত।
সহজ ডটকম এবং রেল বিভাগের বিরুদ্ধে অনিয়ম বিষয়ে ভোক্তা অধিদপ্তরে অভিযোগ করেছিলেন মহিউদ্দিন হাওলাদার রনি। আজ শুনানির দিনে সকাল ১০টার দিকে সহজ ডটকমের প্রতিনিধি এবং অভিযোগকারী মহিউদ্দিন রনি অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় রনির অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ এর ৫৩ ধারা মোতাবেক সহজ ডটকমকে এ জরিমানা করা হয়।এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। যার একটি অংশ অর্থ্যাৎ ৫০ হাজার টাকা পাবেন রনি।