অনলাইন ডেস্কঃ
শান্তিতে নোবেল পুরস্কার কে পেতে পারেন, তা নিয়ে প্রতিবছরই সবার আগ্রহ থাকে। এ বছরও এমনই কিছু ব্যক্তি, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সংস্থার নাম আলোচনায় এসেছে।
৭ অক্টোবর অসলোতে দেওয়া হবে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার। এ বছরে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নিন্দা জানানো হতে পারে। এ কারণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধীদের কেউ এ পুরস্কার পেতে পারেন।
বিশেষ করে ইউক্রেনে বেসামরিক লোকজনকে সাহায্যকারী স্বেচ্ছাসেবীরা এ পুরস্কার পেতে পারেন। এমনকি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও দেওয়া হতে পারে নোবেল। তিনি এ বছর তালিকার ওপরের দিকেই রয়েছেন।
এর বাইরে চলতি বছরের নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়টি প্রচারকারীদের কেউ। এ তালিকায় আছেন পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গের নামও। নরওয়ের নোবেল কমিটি চাইলে এ ক্ষেত্রে আরও নতুন কোনো চমক হাজির করতে পারে।
তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, এ বছর ইউক্রেনের সংবাদপত্র কিয়েভ ইনডিপেনডেন্ট বা জেলেনস্কি নোবেল পুরস্কারের তালিকায় ওপরে রয়েছেন। জেলেনস্কি নোবেল পুরস্কার পেলে তিনি নেলসন ম্যান্ডেলা, জিমি কার্টার, মিখাইল গর্বাচেভ ও আন্দ্রেই শাখারভদের তালিকায় ঢুকে পড়বেন।
পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর পরিচালক হেনরিক উরডাল বলেছেন, ইউক্রেনের অভ্যন্তরে সত্য অনুসন্ধানে কাজ করা কোনো প্রতিষ্ঠান বা মানবিক সহায়তাকারী কেউ এবার শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেতে পারেন।
হেনরিক উরডাল আরও বলেন, রাশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলোর বিরোধী কোনো নেতার ঝুলিতে যেতে পারে শান্তিতে নোবেল। এর মধ্যে বেলারুশের বিরোধী দলের নেতা সভেতলানা সিখানৌস্কায়া ও পুতিনের কট্টর সমালোচক রাশিয়ার বিরোধী নেতা অ্যালেক্সি নাভালনি রয়েছেন।
এই দুই বিরোধী নেতা ইউক্রেনে রাশিয়ার কর্মকাণ্ড নিয়ে সমালোচনা করে আসছেন। এ বছর তারা দুজনই পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। যারা শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত, সেই নরওয়ের আইনপ্রণেতার মতামত নেয় রয়টার্স। সেখানে নাভালনি ও সভেতলানার নাম উঠে এসেছে। নোবেল পুরস্কারের জন্য যারা নাম প্রস্তাব করতে পারেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক নোবেল বিজয়ী, পার্লামেন্টের সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও আইনের অধ্যাপক। তবে কাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়, তা ৫০ বছর ধরে গোপন থাকে। কিন্তু যারা মনোনয়ন দেন, তারা তাদের পছন্দের নাম বলতে পারেন।
গণতন্ত্র ও দীর্ঘমেয়াদি শান্তির পূর্বশর্ত হিসেবে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করার জন্য গত বছর শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা ও রাশিয়ার সাংবাদিক দিমিত্রি মুরাতভ।
কিয়েভে জেলেনস্কির পরামর্শক মিখাইলো পোদোলিয়াক বলেন, এই কঠিন পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির জন্য এ পুরস্কার হবে তার পূর্ণ দায়িত্ব নেওয়ার স্বীকৃতি। এ পুরস্কার হবে ইউক্রেনের জনগণের জন্য, যারা আজ যুদ্ধ ছাড়া বাঁচার অধিকারের জন্য সর্বোচ্চ মূল্য দিচ্ছেন।
কিয়েভের বাসিন্দা ইভান বেজদুদনি বলেন, ‘ইউক্রেনকে গুরুত্ব দিয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার অর্থ আরও একবার বিশ্ব আমাদের সমর্থন দিচ্ছে।’ ২৪ বছর বয়সী এই শিক্ষক বলেন, ‘ইউক্রেনের জনগণের জন্য এটা সংকেত যে আমরা ঠিক কাজটি করছি। আমরা সঠিক পথে রয়েছি এবং শেষ পর্যন্ত লড়াই করে যাব।’
তবে পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউট অসলোর পরিচালক বলেন, যুদ্ধে জড়িত একটি রাষ্ট্রের নেতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে পুরস্কার কর্তৃপক্ষ সতর্ক থাকবে।
ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণের কথা বলে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ শুরু করে রাশিয়া। তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো এটাকে আগ্রাসন বলে আখ্যা দিচ্ছে।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান ড্যান স্মিথ বলেন, নোবেল পুরস্কার কর্তৃপক্ষ বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য আরেকটি হুমকি জলবায়ু পরিবর্তনের দিকেও নজর দিতে চায়। গ্রেটা থুনবার্গ ছাড়াও যুক্তরাজ্যের প্রকৃতিবিষয়ক সম্প্রচারক ডেভিড অ্যাটেনবরো, টুভালুর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিমন কোফ ও ফ্রাইডে ফর ফিউচার গ্রুপ এ বছর মনোনয়ন পেয়েছে। এ ছাড়া তালিকায় রয়েছে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর, আন্তর্জাতিক শিশু তহবিল ইউনিসেফ, ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেডক্রস ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।