নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর। নতুন আইজিপি কে হবেন এ নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। পুলিশ বাহিনীর পাশাপাশি রাজনৈতিক অঙ্গনেও এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে।
পুলিশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের মতে, আইজিপির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এবার সর্বোচ্চ বিবেচনায় থাকবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। কারণ, নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশ বাহিনীর ভূমিকা থাকবে অগ্রগণ্য। যদি বর্তমান আইজিপির মেয়াদ বৃদ্ধি করা না হয়, সে ক্ষেত্রে তিন পুলিশ কর্মকর্তার মধ্যেই কেউ একজন হতে পারে দেশের পরবর্তী আইজিপি।
পুলিশ সদর দপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, নতুন আইজিপি কে হচ্ছেন তা নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি সদর দফতরের কাজকর্মেও গতি কিছুটা কম মনে হচ্ছে। সবাই তাকিয়ে আছেন পরবর্তী আইজিপির দিকে।
এটিইউ প্রধান মো. কামরুল আহসান
পরবর্তী আইজিপি হিসেবে সবচেয়ে বেশি সম্ভাবনা ও সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আলোচনায় আছেন জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ দমনে গড়ে তোলা পুলিশের বিশেষায়িত শাখা অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের (এটিইউ) প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি (গ্রেড-১) মো. কামরুল আহসান।স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে আইজিপি নিয়োগে সরকারের গুডবুক তথা পছন্দের তালিকায় তার নাম রয়েছে ১ নম্বরে। গত ৩১শে আগস্ট এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি কামরুল আহসানকে পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (প্রশাসন) হিসেবে বদলি করা হয়েছে যা আইজিপির পরে পুলিশ অধিদপ্তরের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদ হিসেবে বিবেচিত।নতুন আইজিপি নিয়োগের প্রাক্কালে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এই গুরুত্বপূর্ণ পদে তার পদায়নকে সরকারের পক্ষ থেকে গ্রিন সিগন্যাল হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তিনি ১৯৬৬ সালে চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ইমামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও সাউথ ইস্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবসায় প্রশাসন বিষয়ে (এমবিএ) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ১৯৯১ সালে বিসিএস (পুলিশ) ক্যাডারে যোগদান করেন। মৌলিক ও বাস্তব প্রশিক্ষণ শেষে খাগড়াছড়ি জেলার সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে পদায়িত হন। এরপর চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী সার্কেল এএসপি, এএসপি ডিএসবি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি, ফেনী জেলার অ্যাডিশনাল এসপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
এছাড়া তিনি ৩ জেলা তথা শরীয়তপুর, চট্টগ্রাম ও যশোর জেলার পুলিশ সুপার, পুলিশ সদর দপ্তরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি (সংস্থাপন) ও অ্যাডিশনাল ডিআইজি (ট্রেনিং) এবং রেলওয়ে রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বনামধন্য পুলিশ কর্মকর্তা মো. কামরুল আহসান জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী মিশনের ‘পুলিশ অ্যাডভাইজার’ হিসেবে সিয়েরালিওন ও সুদানে দায়িত্ব পালন করেন।
সুদান মিশনের কনটিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালনের গৌরব অর্জন করেন তিনি। পাশাপাশি মিশনগুলোতে দৃষ্টান্তমূলক চাকরির স্বীকৃতিস্বরূপ ‘জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক’ লাভ করেন।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান মল্লিক ফখরুল ইসলাম
আইজিপি হিসেবে আলোচনায় আছেন হাইওয়ে পুলিশের (অতিরিক্ত আইজিপি) প্রধান মল্লিক ফখরুল ইসলাম। ১৯৬৯ সালের ১৫ জানুয়ারি বাগেরহাট জেলার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ১৯৯১ সালের ২০ জানুয়ারি ১২তম বিসিএস (পুলিশ) কর্মকর্তা হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশে যোগ দেন মল্লিক ফখরুল ইসলাম।
২০০৩ সালে পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে ভোলা, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, ফেনী জেলার পুলিশ সুপার এবং ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে ডিসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া তিনি কমান্ডার হিসেবে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সুনাম অর্জন করেন। এরপর অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি পেয়ে ২০১২ সালে র্যাবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০১৪ সালে ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে রেলওয়ে পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, সিটি এসবি ও ট্যুরিস্ট পুলিশে কর্মরত ছিলেন।
এসবি প্রধান মনিরুল ইসলাম
মনিরুল ইসলাম ১৯৭০ সালের ১৫ জুন গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর থানায় এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্রিটিশ আইনে স্নাতক হন। তিনি তার অনার্স ও মাস্টার্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে, দ্বিতীয় মাস্টার্স ঢাবির ক্রিমিনাল জাস্টিস এবং জেনোসাইড স্টাডিজ থেকে এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিপ্লোমা করেন।তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের গেস্ট ফ্যাকাল্টি হিসেবে শিক্ষকতা করেছিলেন।
হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর জঙ্গিবাদ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা করেন তিনি। জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে তার অর্জন উল্লেখযোগ্য। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে তার বিশেষ গ্রহণযোগ্যতাও রয়েছে। তিনি ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূলে পুলিশের নবগঠিত কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
তিনি এর আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার হওয়ার দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে ছিলেন। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও জঙ্গি দমনে মনিরুল ইসলাম অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন।ঢাকা মহানগর পুলিশের সিটিটিসি ইউনিট গঠনেও মূল ভূমিকা পালন করেছিলেন।
বর্তমানে তিনি পুলিশের বিশেষায়িত শাখা এসবির প্রধান (অতিরিক্ত আইজিপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি পুলিশ কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সঙ্গগঠন বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। তিনি পুলিশ বাহিনীর কাছে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত রয়েছেন। তাছাড়া সরকারের বিশেষ মহল তাকে পছন্দ করেন এবং তার উপর আস্থা ও রয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের।
মনিরুল ইসলাম ১৯৯৫ সালে ১৫তম বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস) পরীক্ষার মাধ্যমে এএসপি হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেছিলেন। তিনি গোয়েন্দা শাখায় ৯ বছর এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
দেশে জঙ্গিবাদ দমন ও নিয়ন্ত্রণে তিনি কার্যকরী ভূমিকা পালন করেন। অপরাধ দমনে কাজ করতে গিয়ে তিনি দেশ ও বিদেশে অসংখ্য ট্রেনিং ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন। কর্মজীবনে স্বীকৃতি হিসেবে পেয়েছেন বাংলাদেশ পুলিশ পদক ও রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক।