পথে পথে ভোগান্তি

পথে পথে ভোগান্তি তবুও দলে দলে বাড়ি ফিরছে মানুষ

স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে মানুষ। বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড়ে তৈরি পোশাক খাতসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানার শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে রাজধানী ছাড়ছেন তারা। ফলে রাস্তা-ঘাটে মানুষ আর মানুষ, পা ফেলার জায়গা নেই। অফিস শেষে একসঙ্গে সবাই বের হওয়ার কারণে রাস্তায় সৃষ্টি হয়েছে যানজট। একদিকে ভ্যাপসা গরম, অন্যদিকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। রাস্তায় অসহনীয় জ্যাম। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।স্। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবস বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) সকাল থেকে রাজধানীর গাবতলী, সায়েদাবাদ, মহাখালী বাস টার্মিনাল, সদরঘাট লঞ্চঘাট ও রেলস্টেশনগুলো ছিল ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়।

লঞ্চে যাত্রীদের গাদাগাদি: সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পরিস্থিতি ছিল একেবারেই ভিন্ন। স্বাস্থ্যবিধির কোনও তোয়াক্কা নেই এই টার্মিনালে। প্রতিটি পন্টুনেই অতিরিক্ত যাত্রী। লঞ্চগুলোর ডেকের পাশাপাশি সিঁড়ি, বিভিন্ন কেবিনের সামনের গলি ও ছাদেও যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো যাত্রা করলেও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ। প্রতিটি লঞ্চে গাদাগাদি করে যাত্রীরা উঠছেন। তাদের অনেকেই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। ঢাকা নদীবন্দর ও লঞ্চ মালিকদের দাবি, তারা স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে তদারকি করছেন। যাত্রীদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে মাইকিং, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। গতকাল টার্মিনালে যাত্রীদের চাপ বাড়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হয়েছে। পুরান ঢাকার লালকুঠি থেকে ওয়াইজঘাট পর্যন্ত সদরঘাট টার্মিনাল। বিকেলে দেখা যায়, পুরো টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড়। হুড়োহুড়ি করে লঞ্চে উঠছেন যাত্রীরা। টার্মিনালে প্রবেশপথ এবং লঞ্চে ওঠার সময় যাত্রীদের মুখে মাস্ক থাকলেও লঞ্চে ওঠার পর তারা তা খুলে ফেলছেন। এছাড়া কয়েকটি লঞ্চের চালক ও স্টাফদেরও মাস্ক পরতে দেখা যায়নি। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হুড়োহুড়ি করে এম বি তাসরিফ লঞ্চে ওঠেন জামাল ভূঁইয়া। কিন্তু তার মুখে মাস্ক ছিল না। জানতে চাইলে জামাল বলেন, তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে মাস্ক পরা হয়নি।

রামপুরা থেকে সদরঘাটের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছেন পোশাককর্মী রিপন। তিনি বলেন, সরকারি ঘোষিত ছুটি আনুসারে আজ কোরবানি ঈদের আগে শেষ অফিস ছিল। সবাই একসঙ্গে অফিস থেকে বের হয়ে বাড়ি যাচ্ছে। রাস্তায় প্রচন্ড জ্যাম। সদরঘাট যেতে কতক্ষণ যে লাগবে কে জানে? বাড্ডা থেকে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছেন পোশাকশ্রমিক রেহানা খাতুন। তিনি বলেন, কাল থেকে ঈদের ছুটি। আমার ছোট দুই ভাই-বোনকে নিয়ে বাড়ি যাব। মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করব। তিনি বলেন, করোনার কথা বলে আমাদের বাড়ি যেতে মানা করা হচ্ছে। এটা ঠিক না। করোনা হলেও বাড়ি যাব। মা-বাবাকে দেখব। মরলে মা-বাবার কাছে গিয়ে মরব, তবু বাড়ি যাব। হাতিয়াগামী তাসরিফ-১ লঞ্চের যাত্রী মামুনুর রশিদ বলেন, লঞ্চ থেকে ফোনে জানানো হয়েছে সন্ধ্যা ৬টার পরিবর্তে সকাল আটটায় লঞ্চ ছেড়ে দিবে। এরমধ্যে যাত্রী এসে লঞ্চ ভরে গেছে। এরপরও লঞ্চ ছাড়েনি। ৮টার পরিবর্তে সেই লঞ্চ ছেড়েছে সকাল ১০টায়। কোথাও পা রাখার জায়গা নেই। ডেকে হাঁটা যায় না। ছাদেও যাত্রী রয়েছে। বৃষ্টি হলে তাদের ভিজতে হবে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের ঢাকা নদীবন্দরের যুগ্ম-পরিচালক জয়নাল আবেদীন বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে আজ টার্মিনালে ভিড় বেড়েছে। যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ২০টি অতিরিক্ত লঞ্চ যুক্ত করা হয়েছে। এর বাইরে আরও শতাধিক লঞ্চ যাত্রী নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যাবে। তিনি বলেন, লঞ্চে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে তদারকি করছি। কোনো লঞ্চ যাতে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে ঘাট ছাড়তে না পারে, সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। বিকেল পর্যন্ত ২৯টি লঞ্চ ঘাট ছেড়ে গেছে। বাকি লঞ্চগুলো সন্ধ্যা এবং রাতের মধ্যে ঘাট ছাড়বে।

ট্রেন: অন্যদিকে সকালে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে নির্ধারিত সময়ে বেশ কয়েকটি ট্রেন ছেড়ে গেছে। প্রতিটি ট্রেনই অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে গন্তব্যে ছুটছে। স্টেশনের প্রবেশপথেও যাত্রীদের হাতে হ্যান্ড স্যানিটাইজার লাগানো হচ্ছে, মাপা হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা। আন্তনগরের কোনও ট্রেনেই টিকিট ছাড়া যাত্রী উঠতে দেওয়া হচ্ছে না। তবে বেসরকারিভাবে চলাচলরত কমিউটার ট্রেনগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। পাশাপাশি আসনেরও টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এই ট্রেনগুলো সব স্টেশনে থামায় অতিরিক্ত যাত্রী জোর করে ট্রেনে উঠে যান বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।

বাস টার্মিনাল: গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী টার্মিনাল থেকে বড় বড় কোম্পানির এসি বাসগুলোতে অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে যাত্রী পরিবহন করা হলেও অধিকাংশ বাসই তা মানেনি। সব আসনে যাত্রী নিয়ে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। গাবতলী টার্মিনালে দেখা গেছে, সেলফি পরিবহনের একটি বাসে পাশাপাশি যাত্রী তোলা হচ্ছে। এছাড়া আরও বেশ কয়েকটি পরিবহনকে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে গন্তব্যের উদ্দেশে যেতে দেখা গেছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেছেন, যে কোম্পানি বা মালিক আইন লঙ্ঘন করে পরিবহন পরিচালনা করবে তার সদস্যপদ বাতিল হবে। আমরা এরইমধ্যে সব মালিক ও কোম্পানিকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি তারা যেন স্বাস্থ্যবিধিসহ সরকারি নিয়ম মেনে পরিবহন পরিচালনা করেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও অনুরোধ করেছি তারা যেন সড়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।

মহাসড়কে দীর্ঘ যানজট: অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কে ১৭ কিলোমিটার এলাকায় উত্তরবঙ্গমুখী লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সোমবার ভোর থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু থেকে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার রসুলপুর পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজটের কারণে চালক, যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের ভোগান্তি বেশি। সকালে মহাসড়কের রসুলপুর, পৌলি, এলেঙ্গা, আনালিয়াবাড়ী ও জোকারচর এলাকায় এমন চিত্র দেখা যায়। উত্তরবঙ্গমুখী গাড়ি আটকে রয়েছে। টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার বিপিএম জানান, টাঙ্গাইল অংশে যানজট নিরসনের জন্য ৬০৩ জন পুলিশ মহাসড়কের কাজ করছে। এর বাইরেও প্রায় ২০০ হাইওয়ে পুলিশ কাজ করছে।

এদিকে যানবাহনের চাপে মহাসড়কে সৃষ্টি হয় দীর্ঘ যানজট। বিকেল পর্যন্ত পাটুরিয়ার ঘাট এলাকায় দেড় কিমি এলাকাজুড়ে যানবাহনের দীর্ঘ যানজট রয়েছে। উভয় ঘাটে ফেরি পারাপারের অপেক্ষায় সহস্রাধিক ছোট-বড় যানবাহন দেখা গেছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *