ঢাবি প্রতিনিধিঃ
‘দ্গদ্গে জ্বলন্ত কয়েলের ওপর বসে আছে জীবন্ত মশা! দিনে দুপুরে মশারি টানিয়ে ফাইনাল পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেউ কেউ।’ সারা দেশে যখন ডেঙ্গু আতঙ্ক চরমে তখন এমন দৃশ্য ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এখন ডেঙ্গুর প্রকোপ কমলেও কমেনি মশার অত্যাচার। দিনের বেলা মশার উৎপাত কিছুটা কমলেও সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় প্রবল আক্রমণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অনেক শিক্ষার্থীই সন্ধ্যার পরে মশারি টানিয়ে তার ভেতর অবস্থান করে লেখাপড়া করেন।
মশার কামড়ের কারণে শান্তিমতো ঘুম কিংবা পড়াশোনা কোনোটাই করতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। মাস্টার দ্যা সূর্যসেন হলের শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা আজাদ বলেন, হলে মশার উপদ্রব ইদানীংকালে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। দিনে বা রাতে হোক মশারিবিহীন এক ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন ঘুম অচিন্তনীয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনেরও তৎপরতা আরও বাড়ান উচিত।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হলের আশপাশের নর্দমা, ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করে শুধু ওষুধ স্প্রে করায় কোনো লাভ হচ্ছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহীন রহমান আরফিন যুগান্তরকে পাঠান এক চিঠিতে জানান, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষাগুলো হয়ে থাকে। তাই সবাই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চাই। কিন্তু মশার অত্যাচারে তা হচ্ছে না। দিন নেই, রাত নেই মশার কামড়ে মানুষ অতিষ্ঠ। আবাসিক হলের ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করা, ময়লা-আবর্জনা ঠিকমতো অপসারণ না করা, দুর্বল পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা- এসব কারণে হলগুলোতে মশার উপদ্রব বাড়ছে।
থেমে থেমে সিটি কর্পোরেশন থেকে মশা নিধনে ছিটান ওষুধে আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় গত বছরের শেষ দিকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মশা নিধনের সিদ্ধান্ত নেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল স্ব স্ব উদ্যোগে ফগার মেশিন ক্রয় এবং কীটনাশক ওষুধ ছিটানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। কিন্তু শিক্ষার্থীরা বলছেন, ওষুধ ছিটানোর পরেও তা ঠিকমতো কাজ করছে না। অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রসিকতা করে লিখছেন, মশার ওষুধ ছিটানোর পরে মশা মাতাল হয়ে যায়, তখন পাগলের মতো কামড়াতে শুরু করে!
শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের তৃতীয় বর্ষের এক আবাসিক শিক্ষার্থী বলেন, ‘জহুরুল হক হলের মেইন বিল্ডিংয়ে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কয়েল জ্বালাই এবং মশারি টানিয়ে পড়তে বসি! যেদিন নিচ তলায় মশার ওষুধ দেয় সেদিন দ্বিতীয় এবং তৃতীয় তলায় আরও বেশি মশা লাগে।’ সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী রেজওয়ানা বন্যা বলেন, ‘ সুফিয়া কামাল হলেও প্রচুর মশা। মশার জন্য ওষুধ দেয়া হলেও মশা কমে না।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ কামাল বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে মশা এক আতঙ্কের নাম। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নয় পুরো ঢাকা শহরেই রয়েছে মশার ছড়াছড়ি। মশার উপদ্রব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেভাবে দেখা দিয়েছে তা শিক্ষার্থীদের জীবনে বয়ে আনতে পারে করুণ পরিণতি। এর মধ্যে কয়েকটি তাজা প্রাণ কেড়ে নিয়েছে এ মশা। তাই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনতিবিলম্বে মশা নিধনে আরও জোরালো পদক্ষেপ নেয়া উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিস এবং প্রতিটি হল মশা নিধনে কাজ করছে। সিটি কর্পোরেশনও নিয়মিতভাবে ওষুধ ছিটাচ্ছে।’ ওষুধ ছিটানোর পরেও কেন মশা কমছে না জানতে চাইলে প্রক্টর বলেন, ওষুধে কোনো ভেজাল করছে কিনা সেটি বিক্রেতারা জানেন। প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাই ভেজাল ওষুধ বন্ধে তারা যেন পদক্ষেপ নেয়।