ঢাবি প্রতিবেদকঃ
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় অন্তত চারজন আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) রাতে ছাত্রলীগের শোভাযাত্রা শেষে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে এ ঘটনা ঘটে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গমাতা হলের একাধিক শিক্ষার্থী মর্নিং ট্রিবিউনের এই প্রতিবেদককে জানান, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বেনজীর হোসেন নিশির অনুসারীরা হল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। সাবেক সাধারণ সম্পাদক রনক জাহান রাইনের যে গ্রুপ ছিল, সেটি তানিয়া আক্তার তাপসী নিয়ন্ত্রণ করতেন। হল কমিটিতে জায়গা পাননি তাপসী। পরে ঢাবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হলে তাপসীর গ্রুপের কর্মীরা ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের গ্রুপে ভিড়ে যান।
আজ শুক্রবার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় তাপসী গ্রুপের কর্মীরা আলাদাভাবে আসায় চড়াও হন হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি কোহিনূর আক্তার রাখি ও সাধারণ সম্পাদক সানজিনা ইয়াসমিন। এ সময় কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে হাতাহাতি হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই হলের একাধিক আবাসিক শিক্ষার্থী জানান, কোহিনূর আক্তার রাখি ও সানজিনা ইয়াসমিনের নেতৃত্বেই মারধরের ঘটনা ঘটে।
কিন্তু বঙ্গমাতা হলের শিক্ষার্থী ছাত্রলীগের সাবেক প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপসম্পাদক তানিয়া আক্তার তাপসী প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে ওই হলের সভাপতি-সেক্রেটারির সঙ্গে না গিয়ে আলাদা গ্রুপ নিয়ে অংশগ্রহণ করতে চান এবং তার অনুসারীদের জন্য আলাদা শাড়ি দাবি করেন। কিন্তু সভাপতি-সেক্রেটারি তাদের শাড়ি দিতে অস্বীকৃতি জানান।
এরপর তাপসী তার অনুসারীদের নিয়ে আলাদাভাবেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। সন্ধ্যায় হলে ফিরে গেলে এ নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। হলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক তাপসীকে হল থেকে বের দেওয়ার হুমকি দেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়।একপর্যায়ে হাতাহাতি এবং সংঘর্ষের সৃষ্টি হয়।
আহতরা হলেন- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক মুক্তিযুদ্ধ ও গবেষণা বিষয়ক উপসম্পাদক ও হলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রনক জাহান রাইন, প্রশিক্ষণ উপ সম্পাদক তানিয়া আক্তার তাপসী, ছাত্রলীগ কর্মী সোলতানা ও সাধারণ শিক্ষার্থী শাহিদা আক্তার। আহতরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টার থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
পরে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. নিলুফার পারভীন, ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত উভয়পক্ষের সঙ্গে আলাপ করে সমাধানের করার চেষ্টা করেন।
প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীরা বলেন, শাহিদা তার রুম থেকে খাবারের জন্য নিচে নামেন, কিন্তু সেখানে হাতাহাতির মাঝখানে পড়ে যাওয়ায় তাকে তাপসীর গ্রুপের কর্মী মনে করে মারধর করা হয়। সে আহত হওয়ার পর, তাকে হাসপাতালে নিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।।
এ বিষয়ে প্রক্টর এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, শিক্ষার্থীদের মাঝে উত্তেজনার খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করেছি।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত গণমাধ্যমকে বলেন, শাড়ি দেওয়া-নেওয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে বলে শুনেছি। তদন্ত করে আমরা এ বিষয়ে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
এদিকে ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন জানান, আমরা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি।