ঢাবি প্রতিনিধিঃ
ছিনতাইকারীরা কারা?
বাইক কিনতে আসা এক ব্যক্তির নিকট থেকে থেকে দশ হাজার টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছিনতাইকারীকে আটক করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। ছিনতাইয়ের দায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রকে গ্রেফতার করেছে শাহবাগ থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী নুর উদ্দীন আহমেদ এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুনতাসীর।
দুইজন ছিনতাইকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারী। পলাতক অন্য আসামীর নাম মো: রাজীব।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ব্যক্তি থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ এই অভিযোগকে মামলা হিসেবে গ্রহণ করে আটক ছাত্রলীগের নেতাদের শাহবাগ জাদুঘরে সামনে থেকে গ্রেফতার দেখিয়ে কোর্টে পাঠায়।
মামলার এজহারসূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী রিফাত রিমন নামে তার পরিচিত এক ব্যক্তির সূত্রে একটি ব্যবহৃত মোটরসাইকেল কেনার উদ্দেশ্যে ১৫,০০০/- টাকা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে যান। কিন্তু রিফাত রিমনদের মোটর সাইকেল নিয়ে আসতে দেরী হওয়ায় তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘুরতে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার সময় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গ্লাস টাওয়ারের পশ্চিম পার্শ্বে নুর উদ্দীন আহমেদ এবং আবদুল্লাহ আল মুনতাসীরসহ তাদের অপর আরো একজন সহযোগী নুর উদ্দিন আহমেদ (২৪) মিলে তাকে ঘিরে ধারেন এবং বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন করে তার নিকট যা কিছু আছে বের করে দিতে বলে। এসময় ভুক্তভোগী দিতে অস্বীকার করিলে আসামীরা তার মাথায়, মুখে ঘুষি মেরে তাকে আহত করে এবং প্যান্টের পিছনের ডান পকেটে রাখা মানিব্যাগ থেকে নগদ ১৫,০০০/- টাকা জোর পূর্বক ছিনিয়ে নেয়।
এজহারে বলা হয়, মুনতাসির তার মোবাইল দিয়ে আমার ছবি তোলে এবং আমার পিতার মোবাইল নম্বর নিয়ে তার মোবাইল নম্বর থেকে আমার পিতার মোবাইলে ফোন করে। কিন্তু আমার পিতার সাথে কথা না বলে কেটে দেয়। আমার পিতার সাথে সাথে ফোন ব্যাক করলে আমি আসামী মুনতাসির এর মোবাইল স্ক্রিনে আমার পিতার মোবাইল নম্বর দেখতে পাই। তারপর তাহারা আমাকে চড় থাপ্পর মারিয়া চলিয়া যাওয়ার সময় আমি তাদের পা ধরে আমার টাকা ফেরত চাইলে তাহারা ৫,০০০/- টাকা আমাকে ফেরত দিয়ে দ্রুত চলিয়া যায়।
এজহারে আরো উল্লেখ করা হয়, আমি আমার মোবাইল ফোন দিয়ে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে ঘটনা জানাইলে তাৎক্ষনিক শাহবাগ থানার এসআই মো: জাহাঙ্গীর হোসেন স্যার সঙ্গীয় পুলিশসহ আমার নিকট হাজির হইলে আমি তাহাদের কাছে ঘটনা বলি। তখন এসআই মো: জাহাঙ্গীর হোসেন স্যার আমার পিতার নিকট হইতে আসামী মুনতাসির এর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করিয়া সে উক্ত ফোনে কৌশলে কথা বলিয়া ছিনতাইকারী উক্ত আসামী ১। নুর উদ্দিন আহমেদ (২৪), ও ২। আব্দুল্লাহ আল মুনতাসির (২৫)কে বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর প্রধান গেইটের অনুমান ২০ গজ দক্ষিণে পাকা রাস্তার উপর গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করিলে তাহারা উল্লেখিত ঘটনার কথা স্বীকার করে। এসময় দুজনের পকেট থেকে আড়াই হাজার করে পাঁচ হাজার টাকা ও তাদের ব্যবহৃত দুইটি ফোন উদ্ধার করে পুলিশ।
শাহবাগ থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ভুক্তভোগীর বাবার নম্বরে ফোন দেয়াটাই আসামিদের জন্য কাল হয়েছে। এর মাধ্যমে সেই আসামির নম্বর সংগ্রহ করে তাদের আরও টাকার লোভ দেখিয়ে জাদুঘরের সামনে আসতে বলা হলে তারা দুইজন ছিনতাইকারী আরও টাকা নেয়ার জন্য রাত সাড়ে আটটার দিকে আসলে আমরা তাদের আটক করি। এরপর ভুক্তভোগী তাদের শনাক্ত করেন।
তিনি বলেন, পরে আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। এবং তাদের দুইজনের পকেট থেকে আড়াই হাজার টাকা করে মোট পাঁচ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।
গ্রেফতার হওয়া ছাত্রলীগ নেতা নুর উদ্দীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কেন্দ্রীক শীর্ষ ছিনতাইকারী বলে জানা যায়। এর আগেও থানায় বেশ কয়েকটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ গেছে তার বিরুদ্ধে। নুর উদ্দীনসহ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সমন্বয়ে একটি গ্যাং ছিনতাইয়ের কাজে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। ক্যাম্পাস ও উদ্যানে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরাই তাদের প্রধান টার্গেট হয়ে থাকে।
ঘটনার প্রসঙ্গে ছাত্রলীগের সেক্রেটারি তানভীর হাসান সৈকত বলেন, ছাত্রলীগ এখন স্মার্ট রাজনীতি করে। ছাত্রলীগ কোন ছিনতাইকারী অপরাধকে প্রশ্রয় দিবে না এবং অপরাধীকেও না। কেউ অপরাধ করলে প্রশাসন কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের তাদের আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে আমারাও এটা প্রত্যাশা করি। ছাত্রলীগের আচরণবিধি ভঙ্গ করে অপরাধ করলে আমরাও যে কারো বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। তাদের কাউকে ও ছাড় দেওয়া হবে না ।