বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদকঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে ‘আবরার ফাহাদ স্মৃতি সংসদ’ ব্যানারে আয়োজিত এই স্মরণসভা কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ ও ছাত্র অধিকার দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে পুলিশ কয়েকজনকে আটক করে। পরে আহতরা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানে পরিষদের নেতা-কর্মীদের ফের অবরুদ্ধ করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে আরেক দফা গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল টিএসসিতে সংঘর্ষের ঘটনার আদ্যপান্ত তুলে ধরা হল।
আবরার ফাহাদের স্মরণসভায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদের ২২জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (৭ অক্টোবর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্য এলাকা এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়। মর্নিং ট্রিবিউনের কাছে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ।
শাহবাগ থানার ওসি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে ঘটনাস্থল থেকে ২২জনকে আটক করা হয়েছে৷ আমরা তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হবে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন-ছাত্রলীগ যদি কোন অভিযোগ দেয় তাহলে মামলা দায়ের হবে।’
ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন বলেন, ‘ফ্যাসিবাদের প্রতিবাদ করায়, আবরার ফাহাদকে স্মরণ করায় আমাদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হামলা করে। প্রথম দফায় হামলার পর দ্বিতীয় দফায় তারা আবার হামলা করে। সেখান থেকে বিনা কারণে আমাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়।’
প্রত্যক্ষদর্শী টিএসসির কয়েকজন বলেন, শুক্রবার বিকেল সাড়ে তিনটায় আবরার ফাহাদের স্মরণসভা উপলক্ষে ব্যানার হাতে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে দাঁড়ায় ছাত্র অধিকার পরিষদের শতাধিক নেতা-কর্মী। তখন তারা বিভিন্নরকম উস্কানিমূলক স্লোগান দিচ্ছিল। সভাটি রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে শুরু হলে প্রথমে ছাত্রলীগের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিষয়ক সম্পাদক মো. আল আমিন রহমান, মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান এবং নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদ সেখানে যান। সেখানে তাদের শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রোগ্রাম আয়োজন করতে বলেন। বাগবিতাণ্ডা পর তারা সেখান থেকে চলে যান।
পরে ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান, মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক নাহিদ হাসান এবং নাট্য ও বিতর্কবিষয়ক সম্পাদক ফয়সাল মাহমুদের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী বাধা দেয়। ছাত্রলীগ সেখানে বাধা দিতে গেলে সভার আয়োজক ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডা থেকে পরে মারামারি বাধে। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের পেটান ও ধাওয়া দেন। এ সময় দুই পক্ষ পরস্পরকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। অবশ্য ধাওয়ায় টিকতে না পেরে ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।
হামলায় ছাত্র অধিকার পরিষদের ১৩ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে রয়েছে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি আখতার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন, সহ-সভপতি আসিফ মাহমুদ, সাহিত্য সস্পাদক জাহিদ আহসান, কর্মী হাসিব প্রমুখ।
ছাত্র অধিকার পরিষদের হামলায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো.নাজিম উদ্দিনসহ ৮-৯জন গুরুতর ভাবে আহত হন। ছাত্রলীগেরও বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন নেতারা। তাদের মধ্যে আছেন বরিকুল ইসলাম বাঁধন, উপ আইন সম্পাদক শেখ সুজন, উপ সম্পাদক ফয়সাল আমিন তামিম, কর্মী আমিনুল ইসলাম। টিএসসি এলাকার পথশিশু সাকিল আহত হয়েছে।
তবে হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান। তিনি বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কখনো জঙ্গিবাদ, মৌলবাদের ঠিকানা হতে পারে না। তারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগতদের মাধ্যমে জঙ্গি কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায়। তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চায়। যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে আঘাত হানে। ফলে সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করেছে।’
এদিকে আবার আহতরা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছাত্রলীগের নেতারা কয়েক দফায় তাঁদের ওপর হামলা করে।
হামলায় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি এম. এম মহিন উদ্দিন, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব খান, সাংগঠনিক নাজিম উদ্দীন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক আল আমিন রহমান, উপ-দপ্তর সম্পাদক শিমুল খান, আব্দুর রাহিম, জহুরুল হক হল ছাত্রলীগের সভাপতি কামাল উদ্দীন রানা, সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেনসহ কেন্দ্রীয়, ঢাবি ও হল শাখা ছাত্রলীগের কয়েকশ নেতাকর্মী অংশ নেয়।
আহত ছাত্রলীগ নেতার মামলা
শুক্রবার রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক নাজিম উদ্দীন বাদী হয়ে ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাবি শাখার সভাপতি আকতার হোসেনকে ১ নম্বর ও সাধারণ সম্পাদক আকরাম হোসেন কে ২নম্বর সহ মোট ১৮ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন শাহবাগ থানায়।
‘স্বেচ্ছা কারাবরণ’ কর্মসূচি
ছাত্র অধিকার পরিষদের কমপক্ষে ২০ জন নেতা-কর্মী রাজধানীর শাহবাগ থানায় গতকাল থেকে আটক আছেন। তাদের আটকের প্রতিবাদে আজ শনিবার ‘স্বেচ্ছা কারাবরণ’ কর্মসূচি পালনের ডাক দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ। দলটির সদস্যসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) নুরুল হক এ কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন সবাইকে ।
গণ অধিকার পরিষদ জানিয়েছে, শনিবার বেলা ১১টায় পল্টন থেকে এই কর্মসূচি শুরু হবে। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে শাহবাগ থানায় যাবেন নুরুলের দল ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা।