স্বপ্নের পদ্মা সেতু

জনসাধারনের জন্য খুলে দেওয়া হলো স্বপ্নের পদ্মা সেতু

উদ্বোধনের পর দেশের সবচেয়ে বড় যোগাযোগ প্রকল্প পদ্মা সেতু আজ রবিবার (২৬ জুন) সকাল থেকে যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। আজ ভোর ৬টা থেকে সেতুতে সাধারণ গাড়ি চলাচল শুরু হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা অনুসারে নির্ধারিত টোল দিয়ে সেতু পার হচ্ছে বিভিন্ন যানবাহন। বিষয়টি ইত্তেফাক অনলাইনকে নিশ্চিত করেন পদ্মা সেতু দক্ষিণ থানার এস আই মো. ফিরোজ আল মামুন।

তিনি জানান, ভোর ৬টা থেকে যানবাহন চলচল শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার বেশ আগে থেকেই বিভিন্ন যানবাহন সেতু পার হবার জন্য অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে ভোর ৬টায় টোল প্লাজা দিয়ে সেতুতে গাড়ি চলাচল শুরু হয়। 

বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ এক গণবিজ্ঞপ্তিতে জানায়, পদ্মা সেতুতে ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে গাড়ি চালানো যাবে না। এ সেতুর ওপর যে কোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে ছবি তোলা বা হাঁটতে নিষেধ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) সেতু কর্তৃপক্ষ এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। বিজ্ঞপ্তিতে, সেতু ব্যবহারকারীদের জন্য বেশ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা গুলো হল-

১. পদ্মা সেতুর ওপর অনুমোদিত গতিসীমা ৬০ কিলোমিটার/ঘণ্টা।

২. পদ্মা সেতুর ওপর যেকোনো ধরনের যানবাহন দাঁড়ানো ও যানবাহন থেকে নেমে সেতুর ওপরে দাঁড়িয়ে ছবি তোলা/হাঁটা সম্পূর্ণ নিষেধ।

৩. তিন চাকা বিশিষ্ট যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি, অটো রিক্সা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়ি যোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না।

৪. গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫.৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না।

৫. সেতুর ওপরে কোনো ধরনের ময়লা ফেলা যাবে না।

সরকার নির্ধারিত টোল হার হচ্ছে- মোটরসাইকেলে ১০০ টাকা, কার ও জিপে ৭৫০ টাকা, পিকআপে এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাসে এক হাজার ৩০০ টাকা টোল পরিশোধ করতে হবে।

বাসের ক্ষেত্রে ছোট বাস (৩১ আসন) এক হাজার ৪০০ টাকা, মাঝারি বাস (৩২ আসন বা এর বেশি) দুই হাজার টাকা, বড় বাস (থ্রি-এক্সেল) প্রতি দুই হাজার ৪০০ টাকা টোল দিতে হবে।

এছাড়া ছোট ট্রাককে (পাঁচ টন পর্যন্ত) এক হাজার ৬০০ টাকা, মাঝারি ট্রাকে (পাঁচ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ আট টন পর্যন্ত) দুই হাজার ১০০ টাকা, মাঝারি ট্রাক (৮ টনের বেশি ও সর্বোচ্চ ১১ টন) দুই হাজার ৮০০ টাকা, ট্রাকে (থ্রি-এক্সেল পর্যন্ত) পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, ট্রেইলার (ফোর-এক্সেল পর্যন্ত) ছয় হাজার টাকা। আর ট্রেইলার (ফোর-এক্সেলের অধিক) ছয় হাজারের সঙ্গে প্রতি এক্সেলের জন্য এক হাজার ৫০০ টাকা যুক্ত হবে।

এছাড়া তিন চাকার যানবাহন (রিকশা, ভ্যান, সিএনজি চালিত অটোরিকশা ইত্যাদি), পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা নন-মটোরাইজড গাড়িযোগে সেতু পারাপার হওয়া যাবে না। গাড়ির বডির চেয়ে বেশি চওড়া এবং ৫ দশমিক ৭ মিটার উচ্চতার চেয়ে বেশি উচ্চতার মালামালসহ যানবাহন সেতুর ওপর দিয়ে পারাপার করা যাবে না। সেতুর ওপরে কোনো ধরনের ময়লাও ফেলা যাবে না।

শনিবার পদ্মার মাওয়া প্রান্তে সকাল ১০টায় পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফরসঙ্গীরা। সেতুর মাওয়া প্রান্তে টোল পরিশোধ শেষে উদ্বোধনী ফলক ও ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন। উদ্বোধন শেষে জাজিরা প্রান্তে পৌঁছে সেতু ও ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন।

এরপর জনসভায় যোগদান শেষে জাজিরা প্রান্তের সার্ভিস এরিয়া-২-তে যাবেন। সেখান থেকে তিনি হেলিকপ্টারে ঢাকায় ফিরে আসবেন।

তথ্যমতে, বাংলাদেশের বুকে সবচেয়ে বড় অবকাঠামোর নাম পদ্মা সেতু। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের সেতুটি ঢাকা বিভাগের দুই জেলা মুন্সীগঞ্জ আর শরীয়তপুরকে সংযুক্ত করেছে। সেতুর ডাঙার অংশ যোগ করলে মোট দৈর্ঘ্য ৯ কিলোমিটার। স্টিল আর কংক্রিটের তৈরি দ্বিতল সেতুর ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক আর নিচে একক রেলপথ।

বিশ্বের খরস্রোতা নদীর তালিকায় আমাজনের পরেই পদ্মার অবস্থান। এমন খরস্রোতা নদীর ওপর বিশ্বে সেতু হয়েছে মাত্র একটি। তাই সেতুকে টেকসই করতে নির্মাণের সময় বিশেষ প্রযুক্তির পাশাপাশি উচ্চমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়। পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা ৪২ আর স্প্যান ৪১টি। খুটির নিচে সর্বোচ্চ ১২২ মিটার গভীরে স্টিলের পাইল বসানো হয়। অর্থাৎ প্রায় ৪০তলা ভবনের উচ্চতার গভীরে পাইল নিয়ে যেতে হয়। বিশ্বে এখন পর্যন্ত কোনো সেতুর জন্য এত গভীর পাইলিং হয়নি।

পদ্মা সেতুতে রয়েছে অত্যাধুনিক সিসি ক্যামেরা। সাধারণ আলোক সুবিধার পাশাপাশি সেতুতে রয়েছে আলোকসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনে রয়েছে আর্কিটেকচার লাইটিং। স্বাভাবিক সময়ে নদীর পানি থেকে সেতুর উচ্চতা প্রায় সাত ফুট। এর নিচ দিয়ে পাঁচ তলা উচ্চতার নৌযান চলাচল করতে পারবে। ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা বহুমুখী সেতু রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য বড় শহরের সঙ্গে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার সড়ক ও রেল যোগাযোগ স্থাপন করবে।

পদ্মা সেতু দক্ষিণ এবং পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার উন্নয়নের সঙ্গে দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *