কিশোর গ্যাং এর আক্রমণে অচেতন প্রতিবন্ধী কিশোরকে উদ্ধার করল ঢাবি শিক্ষার্থীরা

ঢাবি প্রতিবেদকঃ

গতকাল ১৬ ই জানুয়ারি ২০২৩,জাতীয় শহীদ মিনার এলকায় রাত ১১:৩০ নাগাদ কিছুটা মানসিক প্রতিবন্ধী ১৮ বছর বয়সী এক কিশোরকে (ইব্রাহিম) বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলকায় নিয়ে আসে স্থানীয় কিশোর গ্যাং এর কিছু সদস্য।তারা তাকে শহীদ মিনারের পিছনের অন্ধকারাচ্ছন্ন জায়গায় নিয়ে জোরপূর্বক ফেন্সিডিল সেবন করায় এবং তার কাছে থাকা মোবাইল ফোন ও নগদ টাকা আত্মসাৎ করে।

সেই সময় শহীদ মিনার চত্ত্বর এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মোল্লা তৈমুর রহমান ,ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মো: শরিয়াতুল্লাহ ও রুবায়েত হাসান রাব্বি।তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী।

ঘটনা কিছুটা আচ করতে পেরে তারা সেখানে এগিয়ে গেলে কিশোর গ্যাং এর সদস্যরা ভুক্তভোগীকে অচেতন অবস্থায় শহীদ মিনারের পিছনে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।

শরীয়াতুল্লাহ ও তার বন্ধুরা তাকে তাৎক্ষণিক ভাবে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে উপস্থিত আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শরনাপন্ন হলে তারা ইব্রাহিমের দ্বায়িত্ব নিতে অস্বীকৃতি জানান এবং বলেন “আমরা এর কোন দায়িত্ব নিতে পারবো না, যা করার আপনারাই করেন। ওনাকে ভর্তি করান ও ওনার সব খরচ আপনাদেরই বহন করতে হবে। যদি ওনার কোন অঘটন ঘটে সেক্ষেত্রে আপনারাই দায়ি থাকবেন। ”

আরো বলা হয়, “ওকে এখানে রাখা যাবে না।”ওকে নিয়ে যেতে হবে।” কোথায় নিয়ে যাবো জানতে চাইলে
পুলিশ বলে,”যেখানে পেয়েছেন সেখানে রেখে আসুন। ”

নিরুপায় হয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীরা ৯৯৯ এর মাধ্যমে জাতীয় জরুরী সেবার শরনাপন্ন হন। সেখানে শাহবাগ থানার ডিউটি অফিসার জনাব মাহবুবুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি ইব্রাহীমকে ভর্তি করে প্রাথমিক চিকিৎসা দিতে বলেন এবং ততক্ষণে উনি চলে আসবেন বলে আশ্বাস দেন।
তারপর অজ্ঞাত পরিচয়ের ইব্রাহিমের দ্বায়িত্ব নিয়ে তার জিম্মাদার হিসেবে ভর্তি ফরমে স্বাক্ষর করেন মোল্লা তৈমুর রহমান। এর পর তাকে আই সি ইউ তে নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করা হয়। সেখানে অবস্থানের ঘন্টাখানেক পর তার জ্ঞান ফিরে এবং সে শুধু বলতে পারে তার বাসা নাজিমুদ্দিন রোডে।
তার অবস্থা কিছুটা স্বাভাবিক হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে ছেড়ে দেয়।
তখন শরীয়াতুল্লা ও তার বন্ধুরা মিলে তাকে নিয়ে নাজিমুদ্দিন রোডে যান তার পরিবারের সন্ধানে। রাত প্রায় ২:৪৫ এর সময় তারা তার পরিবারের সন্ধান পান এবং তাকে তার পরিবারের কাছে নিরাপদে হস্তান্তর করেন।

ইব্রাহীম এর মায়ের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন “আসলে, আমার এই ছেলেটা সুস্থ- স্বাভাবিক না। ও কিছুই মনে রাখতে পারে না। সবকিছুই ভুলে যায়। এমনকি বাসার নাম্বারটাও। ”

বাসায় ফিরে ইব্রাহীম বলেন, “ভাই, আমি ১১ টার দিকে বের হইছি বাসা থেকে। আমাকে আমার বন্ধুরা কল দিয়েছিল। বলেছে চল,শহীদ মিনারে আড্ডা দেই। আমি ও চলে আসলাম। তারপর ওরা আমাকে ফেন্সিডিল খেতে বলে। আমি খেতে চাইনি, ওরা আমাকে মেরেছে ও জোর করে খায়িয়েছে৷ তারপর আমি জ্ঞান হারিয়েছি।আমার আর কিছুই মনে
নেই। “

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *