
ভ্রমণ করা প্রায় সব মানুষেরই পছন্দের বিষয়।আমরা যখন ছুটি পাই বা অবসরে থাকি তখন পরিকল্পনা করি কোথাও ঘুরতে যেয়ে সময় কাটালে কেমন হয়! বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা বছরে এক বা একাধিকবার শীতকালীন সময়টাতে ঘুরতে বেশি পছন্দ করে। কিন্তু সেখানে একবছরেই দেশের সবগুলো জেলা ভ্রমণ করেছেন বায়েজিদ সরকার। তার নিজস্ব বয়ানে তিনি তুলে ধরেছেন বিস্তারিত।
আমি বায়েজিদ সরকার। পড়াশোনা করছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগে। ভ্রমণের নেশা আমার এতো বেশি যে, নিজের জমানো বৃত্তির মাত্র ২০ হাজার টাকা নিয়ে দেশ ভ্রমণে বের হয়ে পড়ি।
ভ্রমণ নিয়ে বিখ্যাত একটি উক্তি আছে, “প্রতিবছর এমন একটি জায়গায় ভ্রমণ করা উচিত যেখানে এর আগে কখনোই যাওয়া হয়নি”। প্রতিবছর নয়, আমি মাত্র ১৫ মাসে দেশের ৬৪টি জেলা ঘুরে শেষ করেছি। আমার এই যাত্রা বাগেরহাট থেকে শুরু হয়ে ফেনী ভ্রমণের মধ্যে দিয়ে শেষ হয়েছিল। ২০ হাজার টাকা দিয়ে শুরু করলেও পুরো দেশ ভ্রমণে আমার খরচ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকার মতো।
ভ্রমণের ক্ষেত্রে অনেক ভালো ঘটনা যেমন আছে, আবার কিছু খারাপ ঘটনারও সম্মুখীন হয়েছি। খারাপ ঘটনাগুলো অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে। আবার কোথাও কোথাও টুরিস্ট পুলিশের খামখেয়ালির জন্য কিছু অসাধু লোকজন সিন্ডিকেট করে ঘুরতে আসা লোকজনের থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলো।
একটা ঘটনা হয়েছিল আমার সাথে, ভোলাগঞ্জে সাদাপাথর দেখতে গিয়ে। গাড়ি থেকে নেমে কিছুদূর হাঁটলেই পৌঁছে যেতে পারতাম, কিন্তু পথিমধ্যে বিপত্তি করল একদল যুবক। তারা বললো হেঁটে যাওয়া গেলেও সেখানে কাউকে হেঁটে যেতে দেওয়া হয় না। তাই তারা আমাকে হুমকি- ধামকি দিয়ে একরকম বাধ্য করলো অতিরিক্ত ভাড়ায় তাদের নৌকা করে যাওয়ার জন্য। আশেপাশে থাকা কয়েকজন স্থানীয় জানালো, এখানে এরা রাজনৈতিক দলের প্রভাবে সিন্ডিকেট করে মানুষকে জোর করে এভাবে নৌকায় যেতে বাধ্য করে।
আরেকটি ঘটনা আছে সিলেটের রাতারগুল ভ্রমণের। সেখানে নৌকা ভাড়া মাত্র আধঘণ্টার জন্য ৮০০-১০০০ রাখা হয়, যেখানে আপনি চর কুকরি-মুকরিতে সারাদিন নৌকায় ঘুরলেও ১২০০ টাকার মতো পড়বে। আমাদের দেশের টুরিস্ট স্পটগুলোতে মানুষের বিচরণ বেশি তাই তাদের থেকে এইরকম অন্যায়ভাবে অর্থ নেওয়া হচ্ছে, যা হয়তো অনেকে প্রথম প্রথম বুঝতে পারেন না। আবার অনেকে জানার পরেও বাধ্য হয়ে দিচ্ছেন সেখানে ঘুরতে গিয়ে। তাই এই বিষয়গুলোতে যদি টুরিস্ট পুলিশ ও কর্তৃপক্ষ যথাযথ পদক্ষেপ নিত তাহলে ঘুরতে গিয়ে মানুষকে এতো ভোগান্তির শিকার হতে হতো না।
আর বেশিরভাগ ঘোরার জায়গাতে ক্যামেরা বিজনেস চালায় একদল লোক। তারা এসে ছবি তুলে দিতে চাইবে। প্রথমে খুব বিনয়ের সাথে বললেও যখন কেউ একইরকম একাধিক ছবি নিতে চাইবে না বা সেগুলোর জন্য অতিরিক্ত টাকা দিতে রাজি হবে না- তখন তারা অনেকে একত্রিত হয়ে মোবাইল, টাকা সবকিছু রেখে দেওয়ার হুমকি দেয়। আমি ঘুরতে যেয়ে অনেক মানুষকে এইরকম সমস্যার মধ্যে পড়তে দেখেছি। কিছু কিছু স্থানে স্টুডেন্টদের জন্য টিকেট মূল্য কম রাখার নিয়ম থাকলেও তা রাখেনি। এইরকম নানা সমস্যার মুখোমুখি আমার হতে হয়েছিল।
আমার ইচ্ছা ভবিষ্যতে একটি ট্রাভেল এজেন্সি খুলবো।যেখানে ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা ঘুরার ক্ষেত্রে সবরকম সুযোগ-সুবিধা পাবে।আমি নিজে যে সমস্যাগুলোর মধ্যে পড়েছি সেরকম তিক্ত অভিজ্ঞতা যেন অন্যদের না হয় সেটা নিশ্চিত করতে চাই।এখন শখের বশে ঘুরে বেড়াই এবং মাঝেমধ্যে ফ্রিল্যান্সিং টুরিস্ট গাইড হিসেবেও অন্যদের গাইড করছি। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে শেয়ার করার জন্য সম্প্রতি “Bayajid edge ” নামের একটি ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল চালু করেছি, যেখানে আমি বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানের ভিডিও ও ছবি তুলে পোস্ট করি।
আমি এখন বিশ্বজয়ের স্বপ্ন দেখছি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে সমগ্র বিশ্বভ্রমণ করে রেকর্ড গড়তে চাই। প্রথমে আমি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো ঘুরার পরিকল্পনা করেছি। তারপর ধীরে ধীরে অন্য মহাদেশগুলো ঘুরবো। ইতিমধ্যে
ইন্ডিয়ান সিকিম,দার্জিলিং, মিরিক,কলকাতা ভ্রমণ করা হয়েছে।অক্টোবরে কাশ্মির এবং নভেম্বরে নেপাল অথবা ‘সেভেন সিস্টার্স’ ভ্রমণের পরিকল্পনা আছে।বাংলাদেশ ভ্রমণে বের হয়ে আমি জানতে পেরেছি আমার দেশ কতো সুন্দর আর মায়া দিয়ে ঘেরা। দেশকে জানতে হলে তাই দেশটা ঘুরে দেখতে হবে, মানুষের সান্নিধ্যে যেতে হবে।