সামিরা,সদ্য বিবাহিত গৃহিণী। আজকে হাজবেন্ডের সাথে আসবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনে। স্বামীর ক্যাম্পাস দেখতে। স্বামীর বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বর্ণিল স্মৃতিচারণের অংশীদার হতে। গতকাল খুব উচ্ছাস নিয়েই রিফাদ বলেছিল ” কালকে তোমাকে নিয়ে ক্যাম্পাসে যাবো , ১০ টার মধ্যে রেডী হয়ে থাইকো কিন্তু।… ”
তবে সকল উচ্ছাস যেন মিলিয়ে যাচ্ছিলো রাত ২ টার পর থেকে। সামিরা স্যাতস্যাতে হয়ে উঠে। কাপড় বদল করলেও রিফাদ আড়োষ্টতায় ভোগে। মাঝখানে কোলবালিশ টা দিয়ে এলার্ম ঘড়ির দিকে মুখ ফিরে শুয়ে পড়লো রিফাদ।
“ধূর! কালকে এতো সুন্দর একটা প্লানিং ছিলো। পিরিয়ড হওয়ার আর সময় হইলো না!”– মনের ভেতরে এমন কথা আকুপাকু করলেও সামিরা কষ্ট পাবে বিধায় বলা হলো না।
শাহবাগ থেকে যখন রিকশায় চড়ে বসছিলো দুজন, রিফাদের এই চিপায় বসে অস্বস্তির মাত্রাটা যেন আরো বেড়ে গেল। আসলে দোষ তো আর ওর নয়, এটাই স্বাভাবিক। মেনে নিতে হবে। আজকে সকালের নাশতাটা খেতেও গা ঘিন ঘিন করছিলো রিফাদের। রুটি চিবোনোর সময় রাতের স্যাতস্যাতে ভাবের কথা মনে পড়ে যায় কেমন জানি লাগে তখন আরো!!!
সামিরা আজকে কলাভবন, কার্জন, মধুর ক্যান্টিন, ডাকসুর ক্যাফেটারিয়া অনেক জম্পেস আনন্দ নিয়ে ঘুরেছে। স্বামীর সেই সূর্যসেন হলের শ্যাডোতে কফিও খেয়ে এসেছে।
“জানো সামিরা, এই দোকানের কফিটা আমার প্রিয় জিনিসগুলোর মধ্যে একটা ছিলো”–
এতো কথা, আনন্দের মাঝেও রিফাদের একটা দূরত্ব ভাব অনুভব করেছে সামিরা ভালো ভাবেই।
পিরিয়ড টা আজকে না হলে রিফাদকে আরো প্রাণবন্ত পেতো সে,এটা বুঝতে পারে। খানিকটা মন খারাপের মেঘ এসেও জমে মন আঙিনায়!!
স্মৃতির পাতায় ভেসে ওঠে ক্লাস নাইনে পড়ার একটি দিনের কথা। স্কুল থেকে ফিরতে পারছিলো না সামিরা পিরিয়ডের রক্ত দাগ সম্বলিত স্কুল ড্রেসে। সাথে অতিরিক্ত ব্যথায় হাঁটাও যেন দুঃসহ তার নিকট। ভালোবাসার মানুষটি নিজের শার্ট খুলে তার পিছে বেঁধে দিয়ে কোলে করে রিকশায় উঠিয়ে দিয়ে এসেছিলো। অবাক দুচোখে সজীবের দিকে তাকিয়ে বলেছিলো ‘ এভাবে বিয়ের পর আমাকে সাপোর্ট দিবা তো?’
স্লান হেঁসে বলেছিলো ছেলেটা ‘ বিয়ের পর এই সময়টাতে তোমাকে সকল কাজে হেল্প করবো। ভালোবাসায় মুড়িয়ে রাখবো’।
সজীবের কথা মনে পড়তেই বাধভাঙ্গা অশ্রু নেমে এলো চোখে। আনমনে বলতে লাগলো ‘আজ রিফাদের জায়গায় সজীব থাকলে আগলে রাখতো আমায়! আড়ষ্টতাপূর্ণ এমন ভালোবাসা হতো না’। সজীবকে ছেড়ে আসা তার জীবনের কতটা ভুল ছিলো তা আজ হাড়ে হাড়ে উপলব্ধি করছে। আচ্ছা, সজীব কী এখনো কবিতা লেখে আমার জন্য কিংবা পূর্নিমা রাতে পুকুর পাড়ে বসে থাকে আমার জন্য
🖋️মোঃ রিয়াদুল ইসলাম